1. Home
  2. বিশ্ব
  3. ইতিহাস গড়লেন মামদানি, হলেন নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র
ইতিহাস গড়লেন মামদানি, হলেন নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র

ইতিহাস গড়লেন মামদানি, হলেন নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র

0
  • 4 hours ago,

৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন। এনবিসি নিউজের পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রগতিশীল ভোটারদের উজ্জীবিত করে এবং দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে তিনি অর্জন করেছেন এই ঐতিহাসিক বিজয়। তার জয়ে যেমন আনন্দে ভাসছে প্রগতিশীল শিবির, তেমনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা।

নিউইয়র্কের ১১১তম মেয়র হলেন মামদানি। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী মামদানি সহজ ব্যবধানে পরাজিত করেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে। কুয়োমো ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে পরাজয়ের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েন। আর বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস গত সেপ্টেম্বরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়ে কুয়োমোকে সমর্থন জানান।

প্রায় এক বছর আগে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করা মামদানির জন্য এটি এক অবিশ্বাস্য উত্থান। একজন তুলনামূলক কম পরিচিত স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান থেকে আমেরিকার সবচেয়ে বড় শহরের নেতৃত্বে পৌঁছে গেলেন তিনি। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে তিনি নিউইয়র্কের প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরিকে দু’দুবার হারিয়ে দেন।

এখন জাতীয়ভাবে পরিচিত এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে মামদানিকে সামলাতে হবে বিশাল প্রশাসনিক কাঠামো, বাস্তবায়ন করতে হবে তার উচ্চাভিলাষী নীতিমালা, এবং প্রগতিশীল রাজনীতির জাতীয় ধারায় প্রভাব বিস্তার করতে হবে। তার ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভাড়া নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটে ভাড়া বৃদ্ধিতে স্থগিতাদেশ, সার্বজনীন শিশুসেবা, বিনামূল্যে বাস চলাচল ব্যবস্থা ও সিটি করপোরেশন পরিচালিত মুদি দোকান চালু করা।

এনবিসি নিউজের এক্সিট পোল অনুযায়ী, মামদানি নিউইয়র্কের প্রায় সব জাতিগত গোষ্ঠীর ভোট পেয়েছেন—শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো, এশীয় ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ভোটারদের বড় অংশই তাকে বেছে নিয়েছেন। ৪৫ বছরের নিচের ভোটারদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ছিল বিপুল; কুয়োমোর চেয়ে ৪৩ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন তিনি। অন্যদিকে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটারদের মধ্যে কুয়োমো ১০ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।

শিক্ষাগত পার্থক্যও ভোটের ফলাফলে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে এক্সিট পোল জানায়। এছাড়া গত ১০ বছরে নিউইয়র্কে বসতি স্থাপন করা নতুন বাসিন্দা ও জন্মসূত্রে নিউইয়র্কে থাকা ভোটারদের মধ্যেও স্পষ্ট বিভাজন দেখা গেছে।

তবে মামদানির ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান নির্বাচনজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তার মুসলিম পরিচয় ও ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান নিয়ে বিরূপ প্রচারণা চললেও শেষ পর্যন্ত ভোটাররা তাকেই সমর্থন দেন। এক্সিট পোল অনুযায়ী, ইহুদি ভোটারদের মধ্যে কুয়োমো এগিয়ে ছিলেন ৬০% ভোটে, যেখানে মামদানি পান ৩১% ভোট।

নির্বাচনের শেষ সপ্তাহগুলোতে মামদানি ও কুয়োমোর মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ হয়। কুয়োমো তাকে ‘নিউইয়র্কে বিভাজন সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দেন, অন্যদিকে মামদানি কুয়োমোকে ট্রাম্পের ‘কাঠপুতলি’ বলে সমালোচনা করেন। নির্বাচনের আগের রাতেই ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুয়োমোকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, স্লিওয়াকে ভোট দেওয়া মানে মামদানিকে ভোট দেওয়া।

একইসঙ্গে এক্সিট পোল থেকে জানা যায়, রিপাবলিকান ভোটারদের বড় অংশ স্লিওয়ার চেয়ে কুয়োমোকেই সমর্থন করেছেন—রিপাবলিকানদের ৬১% ভোট গেছে কুয়োমোর পক্ষে, আর স্লিওয়া পেয়েছেন ৩৫%।

গত মাসের শেষদিকে এক আবেগপূর্ণ ভাষণে মামদানি বলেন, তিনি নিজের মুসলিম পরিচয় নিয়ে ‘বর্ণবাদী ও ভিত্তিহীন’ আক্রমণের মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা এই নির্বাচনকে বানাতে চেয়েছে আমার ধর্মবিশ্বাসের ওপর গণভোট, কিন্তু আমি লড়েছি নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের বিরুদ্ধে।’

নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক