1. Home
  2. ধর্ম
  3. ইসলামে শ্রমিকের অধিকার: ন্যায্যতা, সম্মান ও দায়িত্বের সমন্বয়
ইসলামে শ্রমিকের অধিকার: ন্যায্যতা, সম্মান ও দায়িত্বের সমন্বয়

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার: ন্যায্যতা, সম্মান ও দায়িত্বের সমন্বয়

0
  • 1 month ago,

তামান্না সাদিকা

ইসলাম কেবল একটি ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এর প্রতিটি নির্দেশনা মানুষকে ন্যায়, মর্যাদা ও পারস্পরিক কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। শ্রম ও শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাগুলো আজকের বৈষম্যপূর্ণ বাস্তবতায় বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।

১. শ্রমের মর্যাদা: পরিশ্রমই সম্মানের উৎস

ইসলামে শ্রমকে কখনও তুচ্ছ বা হীন নয়, বরং সম্মানজনক জীবনযাপনের উপায় হিসেবে দেখা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“তোমাদের কেউ যদি পাহাড় থেকে কাঠ কেটে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে, তবে তা ভিক্ষা চাওয়ার চেয়ে উত্তম।” — (বুখারী, মুসলিম)

এই হাদিস শ্রমের প্রতি ইসলামের ইতিবাচক মনোভাবের প্রমাণ, যেখানে পরিশ্রম নিজেই ইবাদতের অংশ।

২. সময়মতো ও ন্যায্য পারিশ্রমিক: ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা

“তোমরা শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি দিয়ে দাও।” — (ইবনে মাজাহ)
এই হাদিসে শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার। প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেরি না করে যথাসময়ে পরিশোধ করা ইসলামি নৈতিকতার আবশ্যক অংশ।

৩. জুলুম ও শোষণের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান

ইসলাম যেকোনো ধরনের অর্থনৈতিক শোষণকে নিষিদ্ধ করেছে।
“তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না।” — (সূরা বাকারা: ১৮৮)
শ্রমিককে ঠকানো, মজুরি কম দেওয়া, বা কাজের অতিরিক্ত চাপ— এসবই ইসলামি ন্যায়নীতির পরিপন্থী।

৪. নারী শ্রমিকদের অধিকার: শালীনতা ও সুরক্ষার দৃষ্টিকোণ

ইসলাম নারী শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা স্বীকার করে। নিরাপদ ও শালীন কর্মপরিবেশ, মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং সমান পারিশ্রমিক— সবই ইসলাম স্বীকৃত। নারী যদি শালীনতার সঙ্গে উপার্জন করেন, তা একেবারেই বৈধ ও সম্মানজনক।

৫. মালিক-শ্রমিক পারস্পরিক দায়িত্ব: বিশ্বাস ও ন্যায়ের ভিত্তিতে সম্পর্ক

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
“তোমরা আমানত তাদেরকে দাও যারা তার উপযুক্ত।” — (সূরা নিসা: ৫৮)
শ্রমিক যেন দায়িত্বশীল হন, এবং মালিক যেন শোষণ না করেন— এই ভারসাম্যই ইসলামী শ্রমনীতির মূল।

৬. শিশুশ্রম: নিষেধাজ্ঞা ও করুণা

ইসলামে শিশুশ্রম নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। শিশুদের প্রধান অধিকার হলো শিক্ষা, নিরাপদ শৈশব ও আনন্দময় জীবন। রাসূল (সা.) বলেন:
“সে ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে ছোটদের প্রতি দয়া করে না।” — (তিরমিযী)

শিশুদের দিয়ে শ্রম করানো শুধু অন্যায় নয়, বরং তা তাদের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। ইসলাম শিশুকে পরিবার ও সমাজের পক্ষ থেকে সুরক্ষা ও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার দিয়েছে। ফলে, শিশুশ্রম ইসলামি নীতিমালার আলোকে স্পষ্টভাবে অবৈধ ও অমানবিক।

৭. ধর্মীয় ও সামাজিক কল্যাণ: সহনশীল অর্থনীতি গঠনের পথ

ইসলামী অর্থনীতি জাকাত, সদকা, ওয়াকফ প্রথা এবং ইনসুরেন্সের বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এতে একটি মানবিক, সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে।


ইসলামী শ্রমনীতি কেবল নীতিগত দিকনির্দেশনা নয়, বরং এক কার্যকর মানবিক রূপরেখা। শিশুশ্রম থেকে শুরু করে শ্রমিকের ন্যায্যতা পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ে ইসলামের অবস্থান সুস্পষ্ট, সংবেদনশীল এবং কল্যাণমুখী। এই নীতিগুলো বাস্তবায়ন করা হলে সমাজে শোষণের বদলে শান্তি, বৈষম্যের বদলে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

নিউজটুডে বিডি/ধর্ম