
গুগলের বিরুদ্ধে ইইউর জরিমানা, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি
মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের উপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নতুন করে বিশাল জরিমানা আরোপ করেছে। বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা-বিরোধী আচরণ এবং নিজেদের সেবায় অযৌক্তিক প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগে এই জরিমানা করা হয়েছে। অন্যদিকে গুগল এই জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ডন।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ২৯৫ কোটি ইউরো (৩.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) জরিমানা আরোপ করেছে ইইউ। জরিমানার কারণ হিসাবে গুগলের বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি (অ্যাডটেক) খাতে তাদের প্রভাবশালী অবস্থানের অপব্যবহার এর কথা হয়েছে। ইইউর প্রতিযোগিতা বিষয়ক প্রধান তেরেসা রিবেরা বলেছেন, “গুগল প্রকাশক, বিজ্ঞাপনদাতা এবং গ্রাহকদের ক্ষতি করেছে, যা ইইউর অ্যান্টিট্রাস্ট আইন লঙ্ঘন।”
গুগলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের “নিজস্ব প্রাধান্য” বন্ধ করতে এবং স্বার্থের সংঘাত দূর করতে পদক্ষেপ নেবে। রিবেরা বলেছেন, “গুগলের কাছে ৬০ দিন সময় রয়েছে কমিশনকে জানাতে, তারা কীভাবে এটি করবে। যদি কার্যকর পরিকল্পনা না আসে, কমিশন বাধ্যতামূলক সমাধান আরোপ করবে।” তিনি আরও বলেন, কার্যকর সমাধান হিসেবে গুগলকে হয়তো তাদের অ্যাডটেক ব্যবসার কোনো অংশ বিক্রি করতে হতে পারে।
গুগল এই সিদ্ধান্তকে ভুল বলে উল্লেখ করেছে এবং আপিলের প্রস্তুতি নিয়েছে। গুগলের নিয়ন্ত্রক প্রধান লি-অ্যান মুলহল্যান্ড বলেন, “এটি ইউরোপের ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর এবং বিজ্ঞাপন ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য প্রতিযোগিতা-বিরোধী নয়।” বিজ্ঞাপন গুগলের মূল আয়ের উৎস, এবং এটি অ্যাডএক্স, ডাবলক্লিক, গুগল অ্যাডস ও ডিভি ৩৬০-র মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কমিশন জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে এই সমস্ত প্ল্যাটফর্মে গুগল অ্যাডএক্সকে অযৌক্তিক সুবিধা দিয়েছে।
ইউরোপীয় প্রকাশক কাউন্সিল জানিয়েছে, শুধু জরিমানা যথেষ্ট নয়। শক্তিশালী প্রয়োগ না হলে, গুগল এটিকে ব্যবসার খরচ হিসেবে গণ্য করবে এবং এআই যুগে তাদের আধিপত্য আরও বাড়বে। সম্প্রতি মার্কিন একটি আদালতও গুগলের অ্যাডটেক অভ্যাসের উপর সমাধান প্রস্তাব করতে নির্দেশ দিয়েছে।
শুক্রবারের ঘোষণাটি অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন গুগলের বিরুদ্ধে এক সপ্তাহে তৃতীয় জরিমানা। একটি ফেডারেল জুরি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রায় ৪২৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিয়েছে, আর ফ্রান্সের ডেটা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ ৩২৫ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করেছে কুকিজ আইন লঙ্ঘনের জন্য। তবে মঙ্গলবার গুগল বড় এক জয় পেয়েছে, যখন মার্কিন সরকার তাদের ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি করার দাবিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইইউ এর আগে ২০১৮ সালে গুগলকে ৪১০ কোটি ইউরো এবং ২০১৭ সালে ২৪০ কোটি ইউরো জরিমানা করেছিল। ত
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গুগলের ওপর এই জরিমানাকে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে অভিযোগ করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের টার্গেট করছে। তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন, অ্যাপলের ওপর আরোপিত আগের ১৭ বিলিয়ন ডলারের জরিমানা। তিনি দাবি করেন, ইইউ অবিলম্বে অ্যাপলকে ১৭ বিলিয়ন ডলার ফেরত দেওয়া হোক।
ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়ে বলেন, শুধু গুগলের ক্ষেত্রেই জরিমানার মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬.৫ বিলিয়ন ডলার, যা আমেরিকান কর্মসংস্থান ও উদ্ভাবন থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সমতুল্য। তার প্রশাসন এই ধরনের পদক্ষেপ সহ্য করবে না। তিনি ইইউর এই জরিমানাগুলোকে “অন্যায্য শাস্তি” হিসেবে বর্ণনা করে ঘোষণা করেন, প্রয়োজনে Section 301 ট্রেড তদন্ত শুরু করা হবে, যাতে এসব জরিমানা “অকার্যকর” করা যায়।
নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক