
চীন গোপনে রাশিয়াকে অস্ত্র দিচ্ছে??
ইউক্রেনে রাশিয়ার ড্রোন হামলা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশেষ করে, গত কয়েক মাসে রাশিয়া অনেকগুলো ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যা ইউক্রেনের সামরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, রাশিয়া এই বছরের শেষ নাগাদ ২০ লাখ ফার্স্ট-পার্সন ভিউ (FPV) ড্রোন, ৩০ হাজার লং-রেঞ্জ ড্রোন এবং ৩০ হাজার ডেকয় ড্রোন তৈরির পরিকল্পনা করছে।
এমন পরিস্থিতিতে, চীন গোপনে রাশিয়াকে ড্রোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করছে—যা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ান কোম্পানিগুলোর কাছে পৌঁছাচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের অনুসন্ধানে জানা গেছে, চীনা কোম্পানিগুলো ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রাশিয়ার ড্রোন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর কাছে প্রায় ৪৭ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের যন্ত্রাংশ ও উপকরণ সরবরাহ করেছে।
সরবরাহকৃত উপকরণ
চীন থেকে সরবরাহ করা উপকরণের মধ্যে রয়েছে:
ইঞ্জিন ও পাওয়ার ইউনিট: রাশিয়ার ড্রোনগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহকারী ইঞ্জিন।
মাইক্রোচিপ ও সেন্সর: ড্রোনের নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কার্বন ফাইবার ও ফাইবারগ্লাস: ড্রোনের গঠন ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত।
ক্যামেরা লেন্স ও লিথিয়াম ব্যাটারি: ড্রোনের নজরদারি ক্ষমতা ও চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয়।
রাশিয়ার ড্রোন উৎপাদন কেন্দ্র: আলাবুগা
রাশিয়া তার ড্রোন উৎপাদনের জন্য আলাবুগা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি বৃহৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এখানে ইরানের শাহেদ-১৩৬ ড্রোনের রাশিয়ান সংস্করণ, যেমন গেরান-২, গারপিয়া, এবং গারবেরা ড্রোন তৈরি হচ্ছে। এই ড্রোনগুলো ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে হামলা চালাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চীনের কৌশল: ‘প্লসিবল ডিনাইএবিলিটি’
চীন সরাসরি রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ না করলেও, তার কোম্পানিগুলো রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর কাছে উপকরণ পাঠিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ‘প্লসিবল ডিনাইএবিলিটি’ বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে—অর্থাৎ, চীন দাবি করতে পারছে যে তারা রাশিয়াকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিচ্ছে না।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জানান, তারা নিয়মিতভাবে রাশিয়ার ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ থেকে চীনা-মেইড উপকরণ উদ্ধার করছেন। এক ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা পাইলট জানান, “আমরা প্রায়ই চীনা বোর্ড ও চিপ পাই—যেগুলোর ওপর স্পষ্টভাবে চীনা ব্র্যান্ড লেখা থাকে।”
চীনের অবস্থান
চীন আন্তর্জাতিকভাবে রাশিয়ার আক্রমণকে সমর্থন না করলেও, রাশিয়ার সঙ্গে তার কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখেছে। চীন রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের প্রধান ক্রেতা এবং রাশিয়াকে অস্ত্র ও প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েছেন, রাশিয়া যদি যুদ্ধ হারায়, তাহলে তা চীনের জন্য বিপদজনক হতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র তখন পুরোপুরি চীনের দিকে মনোযোগ দিতে পারে।
চীন সরাসরি রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ না করলেও, তার কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে রাশিয়াকে ড্রোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পাঠিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে ‘প্লসিবল ডিনাইএবিলিটি’ বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে তার কৌশলগত সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে। ইউক্রেনের আকাশে চীনা-মেইড ড্রোনের উপস্থিতি এই সম্পর্কের বাস্তব প্রমাণ।
নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক