1. Home
  2. আইন-আদালত
  3. জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের আত্মপ্রকাশ : নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি
জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের আত্মপ্রকাশ : নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি

জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের আত্মপ্রকাশ : নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি

0
  • 2 years ago,

রাষ্ট্র কে চালাবে, শাসক কে হবে তা নির্ধারণ করবে জনগণ। জনগণ শয়তানকে ভোট দিলেও আমরা মানতে রাজি। বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। আগামী সংসদ নির্বাচন যদি আওয়ামী লীগের অধীনে হয় তাহলে ফলাফল কী হবে তা স্পষ্ট। গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগরিষ্ঠটা। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যেটা চায় সেটাই দিতে হবে। এখন বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।

গত ১৫ বছরে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে বেছে বেছে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার কারণে প্রশাসনে ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ।

জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ (National Council for Political Thought-NCPT) এর আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে ৭ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার, সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকার‘ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডক্টর আব্দুল লতিফ মাসুম এর সভাপতিত্বে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাহ উল আলম সওদাগরের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডক্টর দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার এবং সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সলিমুল্লাহ খান, সাবেক সচিব মোতাহার হোসেন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অনুষদের ডিন আবুল বাশার খান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ডক্টর তারেক ফজল ও অধ্যাপক ডক্টর ইফতিখারুল আলম মাসউদ, দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার প্রমুখ।

সেমিনারের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে আজ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এই ফ্যাসিবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ এর আত্মপ্রকাশে আমি অত্যন্ত খুশী হয়েছি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে এ রকম একটি সংগঠন খুব জরুরী ছিল।

প্রধান অতিথি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র মাঝে মাঝে উঁকি দেয়। ‘৯১ এ যে গণতান্ত্রিক ধারা শুরু হয়েছিল, ২০০৮ এ তা ব্যাহত হয় এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও ভোটাধিকার হরণ করে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন কিনা, সে প্রশ্ন উত্থাপন করেন তিনি।

সেমিনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতদিন ননপলিটিকাল সাইন্স এর মানুষদের কাছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে শোনা যেতো। এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কাছে শোনা যাবে, এজন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারি দলের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ, দল-নিরপেক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশের কোনোটাই উপস্থিত নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘গণভোটের বিধান তো এখনো পুরোপুরি বাতিল হয়নি। প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করেন। দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় কিনা। যদি চায় তবে সেটাই দিতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘দৃশ্যমান রাজনৈতিক সংকট ও সংঘাতের প্রেক্ষিতে সাধারণ নাগরিকদের মতো আমরাও উদ্বিগ্ন। আমরা জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিয়ে বর্তমান সংকটের নিয়মতান্ত্রিক সমাধানের প্রয়াস চাই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রবল আন্দোলনের সুফল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আবার কুফল হচ্ছে তাদের দ্বারা বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাই বর্তমান সংকট। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিকতা প্রদান করেছে। সুতরাং ব্যবস্থাটি উভয় দলীয় প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন। তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে সৃষ্ট জাতীয় ঐকমত্য এখনো অটুট ও অনিবার্য।’

সংগঠনের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ’আমাদের বর্তমান উদ্যোগে বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেছেন, শুধুমাত্র তারাই শামিল নন বরং যারা রাষ্ট্র সম্পর্কে চিন্তা করেন, রাষ্ট্রের ভালো-মন্দ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকেন ও পরামর্শ দিতে চান, এমন সব লোকদের শামিল করা হয়েছে। আমাদের সংগঠনে রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তা করেন, অংশগ্রহণ করতে চান, এমন সকলেই অংশগ্রহণ করতে পারবেন।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার বিচারক ইকতেদার আহমদ বলেন, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে একটা রিট হয়েছিল। কিন্তু মামলার মেরিট না থাকায় প্রথমবার রিজেক্ট হলো। ১৯৯৮ সালে আবার রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছিল। সেই রিটের শুনানি শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ২০০৫ সালে বহাল হলো। অবশেষে ২০১১ সালে সংক্ষিপ্ত আদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হলো।

অবসরে গিয়ে রায় লেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচারপতি যখন অবসরে যান, তখন তাঁর শপথ থাকে না। কাজেই এই সময়ে রায় পরিবর্তন করতে পারে না। ৪:৩ বিভাজিত রায় তৃতীয় বিচারকের কাছে যাওয়া উচিত। সংক্ষিপ্ত রায়ের আদেশ আইনগত হয় নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল মামলায় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধতা দেয়া হয়েছে। ১৯৯৮ সালে রিট আবেদনের সময় সেই বিষয়ে উল্লেখ ছিল না। এটা অনেকটা শিশুর জন্ম হয় নি, তার নাম রাখা হয়েছে এই রকম। সংবিধান ও আইনের আওতায় আদালত কাজ করে। এর বাইরে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে বিচারপতি সিনহা।

তিনি বিচারপতি খায়রুল হক সম্পর্কে বলেন, খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর আমাকে ঢাকার বাইরে একটা জেলায় বদলি করে। যেটা ছিল আমার সিনিয়রিটির সাথে সাংঘর্ষিক। আমার উপর্যুক্ত জায়গায় পোস্টিং না হওয়ায় পরে আমি চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোন পেনশন সুবিধা পাইনি। কারণ এই সরকার দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় লেখালেখি করার কারণে আমাকে বিএনপি-জামায়াত ইসলামীর লোক হিসেবে দেখে।যদিও আমি বিএনপি এবং জামায়াতের কোন পদে নেই।

আগামী সংসদ নির্বাচন যদি আওয়ামী লীগের অধীনে হয় তাহলে ফলাফল কী হবে তা স্পষ্ট। সেই ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব তারানকো আসার পর তারা বললেন যে, এটা তো সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন। পরে আরো একটা নির্বাচন হবে। সেটা আর হয় নি।

তিনি গতকালের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, সব কিছু বন্ধ করে দিবো। এই কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার জরুরী অবস্থা জারি করতে পারে। ২০২৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি ক্ষমতায় আসলে হয়তো পার পেয়ে যাবেন। তখন স্যাংশন উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে এই আশায় আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক থেকে যারা রাজনীতিতে এসেছেন, তাঁরা কম বিতর্কিত। আমার নিজের এক ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিলেন।

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু তার পরেও আওয়ামী লীগ সেখানে ভোট ডাকাতি করেছিল। তখন থেকেই এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে দাবি জানিয়ে আসছিল।

আজকে যারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে দিচ্ছেন তারাই এক সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন।

তিনি আরো বলেন, আমি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিয়ে চিন্তিত নই, আমি দেশকে নিয়ে চিন্তিত।

জনগণের শাসক কে হবে তা নির্ধারণ করবে জনগণ। জনগণ যদি শয়তানকেও ভোট দেয়, তাহলে আমি তা মানতে রাজি।

তিনি বর্তমান সরকারের আমলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন সম্পর্কে বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্স হয়ে গেছে “হোমিওপ্যাথিক পলিটিক্যাল সায়েন্স”। ২০১৪ সালে প্রার্থীবিহীন নির্বাচন দিনে হয়েছিল। ২০১৮ সালে রাতে নির্বাচন হয়েছে। আমি এটাকে বলি “লাইলাতুল ইলেকশন”!

উন্নয়ন হিসেব করলে মৌলিক উন্নয়নগুলো আইয়ুব খানের আমলে সবচেয়ে বেশি হয়েছে। কিন্তু আমরা আইয়ুব খানকে স্বৈরাচার বলি কেন?

১৯৭০ সালে পাকিস্তান আর্মি চাইলে নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করতে পারতো। তারা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়েছিল। রাষ্ট্র কে চালাবে, শাসক কে হবে তা নির্ধারণ করবে জনগণ। আমরা উন্নয়নের চেয়ে গণতন্ত্রকে বেশি ভালোবাসি। বর্তমান সরকারের উন্নয়নকে লুটপাট আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, মেরে খাওয়ার জন্য কিছু একটা করতে হবে। তাই খাওয়ার জন্য উন্নয়ন করেছেন। উন্নয়নে বরাদ্দ না দিলে খাবে কিভাবে?

বাংলাদেশে রাজনীতির ইতিহাসে এরশাদকে “উন্নয়নের নেতা” বলা হয়। জনগণ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। কারণ তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তিনি আরো বলেন, এই সরকারকে বহাল রেখে, এই সংসদকে বহাল রেখে এই নির্বাচন কমিশনকে বহাল রেখে কোন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না‌। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে মশারীকে পর্দা বানিয়ে মহিলারা ভোট দিয়েছেন। কারণ এই দেশের মানুষ নির্বাচন প্রিয়।

বিদেশিদের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের সুজাতা সিং করলে হস্তক্ষেপ হয় না, অন্যরা করলে হস্তক্ষেপ হয় কেন?আমাদের শক্তিশালী গণতন্ত্র দরকার। পৃথিবীর বুকে আমরা একটি উন্নত, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ডক্টর তারেক ফজল বলেন, বিএনপি‍‍‘র মধ্যে সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে তৎকালীন তথ্য মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে ফর্মুলা দিয়েছিলেন। গণতন্ত্র মানলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা মাপার জন্য গণভোটের ব্যবস্থা ছিল। এই সরকার সেটা বাতিল করেছে। তিনি ১/১১ এর সরকারকে জরুরী তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে আখ্যায়িত করেছেন।

মিডিয়ার খবর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১ জানুয়ারি ২০০৯ কলাম লিখেছিলাম ২০০৮ সালের নির্বাচন ছিল মহাপ্রতারণার মহাবিজয়‍‍। মিডিয়ার অভাবে সেই নির্বাচনের ভোট ডাকাতির খবর জানে না জনগণ। কারণ আজকাল মিডিয়ার ভরণপোষণ অনেকেই করে না।

সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে জামায়াতের পক্ষ থেকে বেসরকারি বিল আনা হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগ ও বাম নেতারা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন।

তিনি সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী নির্মল সেনের বক্তব্য রেফারেন্স দিয়ে বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর গ্রামে স্কুল, কলেজ নির্মাণ হতে শুরু করলো। আওয়ামী লীগ ও বামেরা মনে করলো এভাবে উন্নয়ন হতে থাকলো তো বিএনপিকে ধরা যাবে না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ইস্যু নিয়ে তারা মাঠে আসলো।

তিনি ২০০৮ সালের পক্ষপাতপুষ্ট নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আমি সাংবাদিক হিসেবে চাক্ষুষ দেখেছি ব্যালট পেপারের মধ্যে আগে থেকেই সিল মারা ব্যালট পেপার ছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর সলিমুল্লাহ খান বলেন, জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদকে স্বাগত জানাচ্ছি। আপনারা মাঝে মাঝে এই রকম অনুষ্ঠান করে বুদ্ধির উন্মোষ ঘটাবেন।

আমি জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (ন্যাপ মোজাফফর) এবং এমাজউদ্দিন আহমেদ এর মতো তিন গুণী শিক্ষককে পেয়েছি।

লিবারেল ডেমোক্র্যাট বলতে যা বোঝায় তা প্রফেসর ডক্টর এমাজউদ্দিন আহমেদ ভালো করে পড়াতেন।

তিনি আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আমরা ভোট দিতে গিয়েছিলাম। কিছু ছেলে এসে বললেন, আপনাদের কষ্ট করে আর ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে না। আপনাদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে!

এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদ থেকে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা দরকার বলে তিনি জানান।

অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোতাহার হোসেন ২০০৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দেখলেন যে নির্বাচন পেছালে বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়বে। তাই তাড়াতাড়ি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলো। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যা বলেছেন তা যথেষ্ট।তাতে আমাদের আর কিছু বলার নেই।

ডিজিএফআই দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মাধ্যমে বিএনপিকে ভাঙ্গা হলো। আওয়ামী লীগকে ভাঙ্গার চেষ্টা হলো। জামায়াতকে ভাঙ্গার একটা পরিকল্পনা ছিল। সাবেক সচিব হান্নানকে সভাপতি এবং আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে জামায়াত ভাঙ্গার একটা প্রস্তাব এসেছিল। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জেনারেল মতিনসহ সবগুলো লোকই বিএনপির আমলে সুবিধা প্রাপ্ত। কিন্তু পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন সেনাবাহিনী। রুলস অব বিজনেস দিয়ে কিছুই পরিবর্তন হবে না, যদি সংবিধান পরিবর্তন না হয়।

সিএমএইচে ভর্তি করিয়ে এরশাদকে নির্বাচনে আনা হয়েছে। রুহুল আমিন হাওলাদার মনোনয়নপত্র দাখিল না করেও এমপি নির্বাচিত হলেন।

এরশাদের পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ দেশকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছিলেন। প্রতিষ্ঠান বড় কথা নয়, ব্যক্তি বড় কথা।

অনুষ্ঠান শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুমকে সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দিল রওশন জান্নাত আরা নাজনীনকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ এর কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে রাখা হয়েছে।

সংগঠনটি আপাতত প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে বলে জানান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন।