
চকলেট মানে ছোটোদের বায়নার খাবার — এমন ধ্যান-ধারণা পাল্টেছে বহু দিন হলো। অনেকেই চকলেটেই করেন মিষ্টিমুখ, দেন দামি উপহার হিসেবে। আবার নাস্তার টেবিলের অংশীদারও মুখরোচক এ চকলেট। ক্যাডবেরি, ক্যান্ডি, ডার্ক ও হোয়াইট চকলেটসহ নানান নাম, ভিন্ন ধরন ও স্বাদের চকলেট পাওয়া যায় বাজারে। দেশে এ চকলেটের রাজত্ব — সুপারশপ থেকে শুরু করে অলিগলির দোকান অবধি।
রাজধানীর মিরপুরের এক ব্যবসায়ী বলেন, শুধু শিশু-কিশোররাই নয়, বরং সব বয়সের সব মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে এসব চকলেট। দোকানের বেশি বিক্রি পণ্যের মধ্যেও রয়েছে এসব চকলেট।
ক্রেতাদের যখন চকলেটে এতো আগ্রহ, তখন বর্তমানে দেশে চকলেট উৎপানকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান প্রাণের তথ্য বলছে, গত কয়েক বছর ধরেই বাজারে এর রমরমা অবস্থা। বর্তমানে মজাদার এ কনফেকশনারি পণ্যের অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা প্রতিবছর বাড়ছে ২০ শতাংশ হারে। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, বিদেশি ব্র্যান্ডেই এখনও আবদ্ধ বাজারটি।
অন্য এক বিক্রেতা বলেন, সারা দিনই চকলেট বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় আছে সব বিদেশি চকলেট। স্বাদের ভিন্নতা ও মুখোরোচক হওয়ায় বিদেশি চকলেটের চাহিদা সবসময়ই বেশি।
অবশ্য দেশের উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে ভিন্ন কথা। এক দশক আগে যেখানে চাহিদার ৮০ শতাংশই মিটতো আমদানিতে, সেখানে পুরো উল্টে গেছে বর্তমান চিত্র। বাজার সম্প্রসারণে এখন বিশ্বের ৮০টি দেশে রফতানি হচ্ছে দেশীয় ব্র্যান্ডের চকলেট।
প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা বলেন, এ ইন্ডাস্ট্রি দিনকে দিন বড় হচ্ছে। প্রাণ ছাড়াও আরও কয়েকটি ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান এখন চকলেট উৎপাদন করে। এসব চকলেট দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্কহার শিল্পটির কলেবর বাড়াতে বড় বাধা। তাই সরকার নানান ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিলে এ খাতের সম্প্রসারণ ও রফতানি আয় বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হতো।
দেশে-বিদেশে ক্রমবর্ধমান বাজার ধরতে নতুন নতুন উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সরকারকে নীতি সহায়তা দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, কাঁচামাল হিসেবে এ শিল্পের জন্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় চিনি। চিনির সঠিক সরবরাহ ও এর খরচ কমিয়ে আনা গেলে এ শিল্পের সম্প্রসারণ সম্ভব হবে।
এছাড়া কাঁচামাল আমদানি সহজীকরণের পাশাপাশি মূলধনি যন্ত্রপাতিতেও বিশেষ সুবিধার দাবি জানিয়েছে উদ্যোক্তারা।