
নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক বসছে আজ সোমবার। সংবিধান অনুযায়ী, নতুন বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দেবেন, তার খসড়া অনুমোদনের প্রস্তাব বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের জন্য মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানো হবে।
নতুন সরকারের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের আগামীর পথচলার দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব জানা গেছে।
গত ১১ জানুয়ারি শপথ নেয় নতুন মন্ত্রিসভা। এরই মধ্যে দপ্তর বণ্টনও হয়েছে। ৩৬ নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পাশাপাশি গতকাল রোববার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিত হন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এর আগে সচিবালয়ে পুরোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নেমপ্লেট পরিবর্তন করে নতুনদের নেমপ্লেট লাগানো হয়। মন্ত্রীরা সচিবালয়ে পৌঁছলে তাদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা। পদস্থ কর্মকর্তারাও তাদের বরণ করে নেন। এর পর সম্মেলন কক্ষে হয় পরিচিতি সভা।
আজ মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিজ বাড়িতে মন্ত্রিপরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।
আজকের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের আগামীর পথচলার দিকনির্দেশনা দেবেন। তবে নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণের বিষয়টি বৈঠকে গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে।
এদিকে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সচিবালয়ে প্রথম দিন সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভোগ্যপণ্য আমদানিতে কারসাজি করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ, অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে ওঠা, ক্যাডার বৈষম্য নিরসন, কর্মসংস্থান তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি তারা মন্ত্রিসভার বৈঠকে যেসব দিকনির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত হবে, তা বাস্তবায়ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
নতুন সরকারের জন্য দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ দেখছেন দেশি-বিদেশি অনেক অর্থনীতিবিদ। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে ডলার সংকট মোকাবিলা, টাকার অবমূল্যায়ন রোধ, মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো। এসব বিষয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) বলেন, ‘স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠাগুলো কোনো কারসাজি করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সিন্ডিকেটে বিশ্বাসী নই। তবে গুটিকয়েক বড় প্রতিষ্ঠান ভোগ্যপণ্য আমদানি করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানকে সঠিক পথে আনতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে জোরজুলুম করে নয়, বরং উৎপাদন ও আমদানি পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সঠিক উপায়ে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা হবে।’
৭ জানুয়ারির ভোট নিয়ে বাংলাদেশের মিত্র দেশগুলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আয় করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। এসব দেশের অনেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি বলে মন্তব্য করেছে। অন্যদিকে চীন, ভারত, রাশিয়া ও জাপান থেকে বাংলাদেশ অনেক কিছু আমদানি করে। এই দেশগুলো নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এমন অবস্থায় নতুন সরকারের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ দেখছেন অনেকে। তবে সরকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সব ধরনের চ্যালেঞ্জকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।