1. Home
  2. জাতীয় নির্বাচন
  3. ‘না ভোট’ ‘নিজ প্রতীকে নির্বাচন’ সহ বেশ কিছু সংস্কার আসছে নির্বাচনি আইনে
‘না ভোট’ ‘নিজ প্রতীকে নির্বাচন’ সহ বেশ কিছু সংস্কার আসছে নির্বাচনি আইনে

‘না ভোট’ ‘নিজ প্রতীকে নির্বাচন’ সহ বেশ কিছু সংস্কার আসছে নির্বাচনি আইনে

0
  • 8 hours ago,

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ আগামীতে থাকছে না। থাকছে ‘না ভোট’। নির্বাচনি অনিয়মের কারণে পুরো সংসদীয় আসনের ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা থাকবে কমিশনের হাতে। জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে । আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে এবং ইভিএম ব্যবহারসংক্রান্ত বিধান বিলোপ করা হয়েছে। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল বা এমপি নির্বাচিত হলেও তার এমপি পদ বাতিল হবে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে। সোমবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) নিয়ে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

গতকাল সোমবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় ইসির সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, সবখানে ‘না ভোট’ নয়, একক প্রার্থী হলে সেখানে ‘না ভোট থাকবে। জোট হলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে, এতে কমিশন অন্যান্য বাহিনীর মতোই সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর সদস্যদের আইনশৃঙ্খলায় নামাতে পারবে। বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইভিএম ব্যবহার করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। এখন আরপিও থেকে তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইভিএম ব্যবহার হবে না, তাই যাবতীয় বিধান বিলোপ করা হয়েছে আরপিওর প্রস্তাব সংস্কারে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার শাস্তি সুস্পষ্ট করা হয়েছে। তিন কর্ম দিবসের তদন্ত ও ব্যবস্থা ইসিকে জানাতে হবে তিন দিনের মধ্যে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে না ভোটের বিধান ছিল সব আসনে। পরে নবম সংসদে তা বাদ দেওয়া হয়। এবার ‘না’ ভোটের বিধান চালুর প্রস্তাব ছিল সংস্কার কমিশনেরও। কিন্তু ইসি সব আসনে ‘না’ ভোটের বিধান চালু না করলেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধে শুধু একক প্রার্থী থাকলে তাকে ‘না’ ভোটের সঙ্গে লড়তে হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধে এ ব্যবস্থা করেছে ইসি।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘না ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। যদি কোথাও একজন প্রার্থী হয় সেক্ষেত্রে বিনা ভোটে নির্বাচিত হবে না। সার্বিকভাবে না ভোট নয়। যদি কোনো আসনে একজন প্রার্থী হলে তাকেও নির্বাচনে যেতে হবে, তাকে না প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেখানে পুনরায় না ভোট বিজিত হলে তাহলে আর ভোট হবে না। তখন ব্যক্তি, প্রার্থী নির্বাচিত হবে।’ আরপিও একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে বলে জানান তিনি। সরকারের সায় পেলে তা সংশোধন অধ্যাদেশ নামে জারি হবে। সেইসঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের কোনো সুপারিশ থাকলে তা পরে যুক্ত করা হবে।

পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে ইসি :সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ফলাফল স্থগিত এবং বাতিল নিয়ে যে বিধানগুলো ছিল, যেখানে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করার বা ফলাফল বাতিল করার যে সক্ষমতা সেটাকে সীমিত করা হয়েছিল। সেটা আবার পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন অবস্থা বুঝে এক বা একাধিক কেন্দ্র বা পুরো আসনের নির্বাচন স্থগিত, একইভাবে এক বা একাধিক বা পুরো আসনের ফলাফল বাতিল করতে পারবে।

গণনায় থাকতে পারবে সাংবাদিক, লটারি বাতিল :সানাউল্লাহ বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরাও ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা থাকতে চাইবেন তাদের পুরোটা সময়ব্যাপী থাকতে হবে। মাঝপথে বের হয়ে যাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আগে লটারির মাধ্যমে যে বিধান ছিল, যে ভোটের সংখ্যা দুই জন প্রার্থীর মধ্যে যদি সমান হয়ে যায় তাহলে লটারির মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনের যে বিধান ছিল কমিশন সেটা থেকে সরে এসে বলছে, না এটা এক্ষেত্রে পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। লটারির মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচনের যে বিষয়টি এটা কমিশন সঠিক বলে মনে করে না। তিনি বলেন, লটারির মাধ্যমে কেউ আর নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দুই জন প্রার্থী থাকলে ফের নির্বাচন হবে। 

নিবন্ধন স্থগিত করতে পারবে ইসি :এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আগের আরপিওতে নিবন্ধন বাতিলের সুযোগ থাকলে কোনো দলের নিবন্ধন স্থগিতের কোনো সুস্পষ্ট বিধান ছিল না। নিবন্ধন বাতিল না করে কোনো দলের কার্যক্রম স্থগিত থাকলে যেন নিবন্ধন স্থগিত রেখে লঘু শাস্তি দেওয়া যায়, আমরা সে বিষয়টাও আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা আওয়ামী লীগ বা একক কোনো দলের জন্য নয়। 

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ডিজিটাল বিলবোর্ডগুলোতে আলোর ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুতের ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া আলোকসজ্জার ওপর যে নিষেধ ছিল সেটা বলবত থাকবে। ক্যান্ডিডেটদের যে ব্যয় এ ব্যয়ের অডিটের ব্যাপারটাকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং আরেকটু একনিষ্ঠভাবে দেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যেগুলো মনে করে যে, এগুলোতে ব্যত্যয় হয়ে থাকতে পারে সেগুলোকেই অডিট করবে।

জোট করলেও ভোট করতে হবে নিজ দলের প্রতীকে :জোট করলেও ভোট করতে হবে নিজ দলের প্রতীকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, এটা সংস্কার কমিশনেরও প্রস্তাব ছিল। আমরা এখানে উত্সাহিত, নিরুত্সাহিত করার কিছু করছি না। এটা রাজনৈতিক ফ্রিডম। যে কেউ এককভাবে, কেউ দলীয়ভাবে নির্বাচন করবে, নাকি জোটবদ্ধভাবে করবে। যে প্রভিশনটা এখানে সংস্কার কমিশনও প্রস্তাব করেছে। কমিশনও এক্সেপ্ট করেছে সেটা হচ্ছে, জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলেও রাজনৈতিক দলগুলো তার নিজের প্রতীকটা, যে রিজার্ভ প্রতীক আছে, সেটা দিয়ে নির্বাচন করবে। কোনো একটি প্রতীক দিয়ে নয়।  

একজন প্রার্থী কত আসনে ভোটে দাঁড়াতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটা নিয়ে ডিল করছি না। এটা আমরা মনে করি এটা একটা ঐকমত্যের বিষয়। আজকে যা কিছু বললাম ঐকমত্য কমিশনে এর বাইরেও কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) রিলেটেড কিছু কিছু প্রভিশন আসতে পারে এবং সংশোধনীর প্রয়োজন হতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে। আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহ আইন মন্ত্রণালয়ে ভোটিংয়ের জন্য পাঠাতে পারব।

নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক