দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে টানা বর্ষণ, মৌসুমি বৃষ্টি ও একের পর এক ঝড়ের কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে কমপক্ষে ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও শতশত মানুষ। খবর ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি’র।
বন্যা ও ভূমিধসে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বহু এলাকা এখনও পানির নিচে। শ্রীলঙ্কার সরকার ইতোমধ্যে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে বুধবার থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে হাজার হাজার স্থাপনা প্লাবিত হয়েছে। শনিবার (২৯ নভেম্বর) পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় ৩০০ জনের বেশি মারা গেছেন।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, এখনও শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। হাজারো মানুষ ছাদে বা উঁচু স্থানে আটকে আছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজেও বিলম্ব হচ্ছে।
প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ডে ১৬০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। মালয়েশিয়াতেও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শ্রীলঙ্কায় সাইক্লোন ‘ডিটওয়াহর’ তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত ১৩০ জনের বেশি মারা গেছেন এবং প্রায় ১৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। একই সময়ে, ইন্দোনেশিয়ায় বিরল ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ‘সেনিয়ার’ ব্যাপক ভূমিধস ও বন্যার সৃষ্টি করেছে। আচেহ প্রদেশের বাসিন্দা আরিনি আমালিয়া বলেন, ‘পানি এত দ্রুত বাড়ছিল যে সেকেন্ডের মধ্যেই রাস্তা ও বাড়িতে ঢুকে পড়ে।’ তিনি জানান, একদিনের মাঝেই তাদের বাড়িটি পুরোপুরি ডুবে গেছে।
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় সংখলা প্রদেশে পানি ৩ মিটার পর্যন্ত উঠে যায়। সেখানে অন্তত ১৪৫ জন মারা গেছেন। যা দশকের মধ্যে অন্যতম সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। মোট ১০টি প্রদেশে ৩.৮ মিলিয়নের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাট ইয়াই শহরে একদিনে ৩৩৫ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে—যা ৩০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পানি নামার পর সেখানে মৃত্যু সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে।
শহরের একটি হাসপাতালে মরদেহ রাখার জায়গা না থাকায় সেগুলো রেফ্রিজারেটেড ট্রাকে সংরক্ষণ করতে হয়। হাট ইয়াইয়ের বাসিন্দা থানিতা খিয়াওহম বলেন, ‘আমরা সাত দিন ধরে পানিতে আটকে ছিলাম, কেউ সাহায্য করতে আসেনি।’
থাই সরকার পরিবারপ্রতি মৃতদের জন্য সর্বোচ্চ ২০ লাখ বাত (প্রায় ৬২ হাজার মার্কিন ডলার) ক্ষতিপূরণ ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় পারলিস অঙ্গরাজ্যের বেশ কিছু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছে।
শ্রীলঙ্কাও সাম্প্রতিক বছরের অন্যতম ভয়াবহ আবহাওয়া বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়ছে। দেশটির সরকার ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। কর্মকর্তারা জানান, দেশটিতে ১৫,০০০টির বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং ৭৮,০০০-এর বেশি মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই চরম আবহাওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদেরা ফিলিপাইনে সৃষ্ট টাইফুন ‘কোটো’ এবং মালাক্কা প্রণালিতে বিরলভাবে গঠিত সাইক্লোন ‘সেনিয়ার’-এর পারস্পরিক প্রভাবকে দায়ী করেছেন। এই অঞ্চলে প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুম সক্রিয় থাকে।
নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক