1. Home
  2. বিশেষ সংবাদ
  3. বাংলা বর্ষবরণ: কৃষকরাই আসল মালিক
বাংলা বর্ষবরণ: কৃষকরাই আসল মালিক

বাংলা বর্ষবরণ: কৃষকরাই আসল মালিক

0
  • 2 years ago,

-নিউজ টুডে ফিচার ডেস্ক

কৃষকদের নিকট থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্যই মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রচলন করেন।আবহমান বাংলার কৃষকরা চৈত্রের শেষ দিনে, বৈশাখের প্রারম্ভে ‘হালখাতা’ ও ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বছর শুরু করতেন। বাংলা নববর্ষ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ছিলো যেমন কৃষক, অনুরূপ কৃষকরাই এটিকে উদযাপন করতেন বিভিন্ন আনন্দঘন গ্রামীণ উৎসবের মাধ্যমে। পরবর্তীতে শহুরে জনপদ এটিকে কর্পোরেট কালচারে রূপান্তর করেছে সাংস্কৃতিক মিশ্রণের মাধ্যমে।

খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মুঘল সম্রাট জালালউদ্দিন মোহাম্মদ আকবর ইরানের সিরাজ নগরীর জ্যোতির্বিদ আমীর ফতেহ্উল্লাহ্ সিরাজীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন একটি নতুন সাল প্রবর্তনের। বিচক্ষণ জ্যোতির্বিদ ৯৬৩ হিজরী সনের পাশাপাশি প্রণয়ন করলেন একটি সৌর সন, ৯৬৩ বঙ্গাব্দ। এটি কৃষকদের কাছে ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল, যা পরে ‘বাংলা সন’ বা ‘বঙ্গাব্দ’ নামেই বেশি প্রচলিত হয়ে ওঠে।
শহর আর গ্রামের নববর্ষের উদযাপনে ব্যবধান থাকলেও আবহমান বাংলার কৃষকদের মাধ্যমেই পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ উদযাপন সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হয় । গ্রামের সাধারণ মানুষের মাধ্যমে যে উৎসবের শুরু, তা এখন দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বিভন্ন দেশে উদযাপন করা হয়। এ কৃতিত্ব কৃষকদেরই।

বর্ষবরণ যেভাবে কৃষকদের হলো:
শস্যের বিনিময়ে খাজনা আদায় করা হতো মোঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে । নতুন শস্য ঘরে উঠলে রাজ-কর্মচারীরা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাজনা আদায় করে আনতো। তারা যেত হিজরি সনের একটি নির্দিষ্ট তারিখে। কিন্তু ওখানেই বিপত্তিটা বাধলো । প্রতি বছর হিজরি সন সৌরবর্ষ থেকে এগারো দিন ব্যবধান হয়। এক দিনের ব্যবধানে অনেক কৃষকের ফসল ঘরে উঠতো না। ফলে খালি হাতে ফিরে যেতে হতো খাজনা আদায়কারীদের। এতে খাজনা আদায়ে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। চিন্তিত হয়ে পড়লেন সম্রাট আকবর। তখন তিনি ডাকলেন ইরানের সিরাজ নগরীর জ্যোতির্বিদ আমীর ফতেহ্উল্লাহ্ সিরাজীকে। বিচক্ষণ জ্যোতির্বিদ ৯৬৩ হিজরী সনের পাশাপাশি প্রণয়ন করলেন একটি সৌর সন, ৯৬৩ বঙ্গাব্দ।
এরপর চৈত্র মাসের শেষ দিনে জমিদারি সেরেস্তারা প্রজাদের কাছ থেকে কৃষি ও রাজস্ব কর বা খাজনা আদায় করতেন। এ সময় প্রত্যেক চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাসুল বা কর পরিশোধ করা হতো। এর পরের দিন পয়লা বৈশাখে ভূমির মালিকেরা নিজেদের অঞ্চলের প্রজা বা অধিবাসীদের মিষ্টি, মিষ্টান্ন, পান-সুপারি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন।
শুধু খাজনা প্রদান করেই শেষ নয়, পহেলা বৈশাখের কিষাণ কৃষাণী, কামার, জেলে-তাঁতী, দোকানি সবাই নববর্ষর বিশেষ দিনে বিগত বছরটির সব হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে সুন্দর একটি বছর শুরু করার সংস্কৃতি এখনো কম-বেশি বিদ্যমান।

গ্রাম বাংলার বৈশাখি মেলায় গরম জিলাপি, গজা, নকুলদানা, বাদাম, খই, বাতাসাসহ নানা রকমের খাবার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র আর নানা রকমের খেলনা ওঠে। আয়োজন করা হয় বলিখেলা,গম্ভীরা, লাঠিখেলা প্রভৃতি।
আধুনিক শহুরে বৈশাখি সংস্কৃতিতে নতুন পোষাক, ছবি আঁকা, ঢোলের শব্দ, ক্যানভাস তৈরি, মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং পান্তা-ইলিশ ইত্যাদির আধিক্য থাকলেও গ্রামের কৃষকরা এখনও খাজনা প্রদান, হালখাতা, মিষ্টিমুখ প্রভৃতি পালন করে থাকেন। বাস্তবে তারাই পহেলা শৈাখ উদযাপনের আসল মালিক।

বিশেষ সংবাদ