
ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনার ক্ষমতা পেল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের কারণে দেশের প্রায় দুই ডজন ব্যাংক এখন রুগ্ণ। এ তালিকায় সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকও রয়েছে। বিগত দেড় দশকে লুণ্ঠিত হওয়া রুগ্ণ ব্যাংকগুলোকে একীভূত কিংবা অধিগ্রহণ করার ক্ষমতা পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত শুক্রবার জারীকৃত ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।
৯৮টি ধারাবিশিষ্ট এ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো তফসিলি ব্যাংক অকার্যকর হয়ে গেলে বা কার্যকর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা না গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংককে রেজল্যুশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। রেজল্যুশনের অর্থ হচ্ছে, দেউলিয়াত্বের মুখে পড়া ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষাই হবে ব্যাংক রেজল্যুশনের প্রধান উদ্দেশ্য।
অকার্যকর ব্যাংককে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নিতে পারবে বলে অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এক বা একাধিক শেয়ার হস্তান্তর আদেশ জারি করবে। তবে শেয়ার গ্রহীতাকে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি হতে হবে। কোনো ব্যাংকের সুবিধাভোগী মালিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করলে ও প্রতারণামূলকভাবে অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই ব্যাংককে রেজল্যুশনের আওতায় নিতে পারবে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে বাছবিচার ছাড়াই এক ডজনের বেশি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় না হলেও এসব ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে ছয়টি সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। সরকারের মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে আরো তিনটি। আর বেসরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক রয়েছে ৪৩টি। এর মধ্যে ইসলামী ধারার ব্যাংকের সংখ্যা ১০। দেশে বিদেশী নয়টি ব্যাংকও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৩৫টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)। ব্যাংক খাতের মতো গত দেড় দশকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে। এ কারণে অন্তত ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন রুগ্ণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশই খেলাপির খাতায় উঠেছে। তবে খেলাপির এ হার এরই মধ্যে ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ দেখিয়েছিল, বাস্তবে তা ছিল অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে গোপন করা খেলাপি ঋণ ধরা পড়ছে। এ কারণে প্রায় ২৫টি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ যুক্ত হলে খেলাপির হার ৩০ শতাংশেরও বেশি হবে।
ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়াটি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন হয়েছিল গত ১৭ এপ্রিল। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ৯ মে শুক্রবার অধ্যাদেশটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। সরকারের জারীকৃত এ অধ্যাদেশটি ব্যাংক খাত সংস্কারে বড় ধরনের অগ্রগতি বলে মনে করছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (বিএবি) ভাইস চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন তিনি। আবদুল মান্নান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ৬১টি ব্যাংক থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। এ ব্যাংকের অনেকগুলোই অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে শেষ করে দেয়া হয়েছে। রুগ্ণ ও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে রেজল্যুশনের আওতায় এনে সংখ্যা কমিয়ে ফেলার এটিই উৎকৃষ্ট সময়। অধ্যাদেশ জারির পর এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব হবে ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়া।’
নিউজ টুডে বিডি/অর্থনীতি ডেস্ক