
ভারতের হামলায় পাকিস্তানে ৮জন নিহত ; পাল্টা হামলায় ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত
পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে ভারত। স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী একযোগে এই হামলা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ৮ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩৫ জন। জবাবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের বিমানবাহিনীর ৫টি যুদ্ধবিমান, একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। একই সঙ্গে একটি ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করেছে বলে খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ। ভারত দাবি করেছে যে, তারা স্থানীয় সময় রাত ১টা ৪৪ মিনিটে পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের ভিতরে ‘সন্ত্রাসী’দের অবকাঠামোতে হামলা করেছে। এই অভিযান অব্যাহতভাবে মনিটরিং করছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁন্দুর’। মোট ৯টি স্থাপনায় এই হামলা চালানো হয়েছে।

ভারতের হামলায় পাকিস্তানে ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদ । ছবি: ডন-পাকিস্তান
ভারতের এ হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতের পর কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফ্ফরবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে এর বদলা নিতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২২শে এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়। এর পর থেকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এ হামলা চালাল ভারত। পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কাপুরুষ শত্রু ভারত এখন থেকে কিছু সময় আগে ভাওয়ালপুরের আহমেদ ইস্ট এলাকার সুবহান্নাল্লাহ মসজিদ, কোটলি ও মুজাফ্ফরবাদের অন্তত তিন জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে।’ হামলাগুলো ভারতের আকাশসীমা থেকে চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তান এর সমুচিত জবাব দেবে উল্লেখ করে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ঘৃণ্য উসকানি জবাব ছাড়া পার পাবে না।’ তিনি জানান, আহমেদপুরে একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। কাছের একটি বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে একটি শিশু ও তার বাবা-মা আটকা পড়েছেন। তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কোটলিতেও একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। মুজাফ্ফরবাদে একটি সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানি বাহিনী স্থল ও আকাশপথে এই হামলার জবাব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো স্থাপনাকে এই অভিযানে নিশানা করা হয়নি। পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফ্ফরাবাদে বুধবার গভীর রাতে বড় ধরনের একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি সম্ভাব্য নিশানা ছিল মুজাফ্ফরাবাদের বিলাল মসজিদ। ওই মসজিদের পাশেই বসবাস করেন মোহাম্মদ ওয়াহিদ। তিনি বলেন, আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল এমন সময় প্রথম বিস্ফোরণে আমার বাড়িটা কেঁপে ওঠে। আমি দৌড়ে রাস্তায় বের হই। সেখানে দেখি অন্যরাও একই কাজ করছে। আমরা তখনও বুঝে উঠতে পারিনি কী হচ্ছে। এর মধ্যেই আরও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ও বিশৃংখলা দেখা দেয়।
পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি জায়গার আশপাশের বাসিন্দারা প্রাণ ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে আসেন। ওয়াহিদ বলেন, ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন এবং তাদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে ওয়াহিদ বলেন, ‘বাচ্চারা কাঁদছে, মহিলারা দৌড়াদৌড়ি করছে, তাঁরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানিই না কী করব। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে, আর চারদিকে এক অজানা অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না একটি মসজিদ কেন হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো। ওয়াহিদ বলেন, ‘এটা তো সাধারণ একটা মসজিদ ছিল, যেখানে আমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তাম। আমরা এই মসজিদ ঘিরে কখনো সন্দেহজনক কিছু দেখিনি।’
নিউজ টুডে বিডি/আন্তর্জাতিক ডেস্ক