1. Home
  2. বাণিজ্য
  3. অর্থনীতি
  4. ভোটের পর ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি
ভোটের পর ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি

ভোটের পর ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি

0
  • 1 year ago,

রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি পেয়েছে। রপ্তানি আয়ে এখন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনও ঠেকানো গেছে। ভোটের পর অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, “নির্বাচনের পর ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি। প্রতিবার নির্বাচনের আগে একটা অনিশ্চয়তা থাকে। নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় অর্থনীতি।” আগামী জুনের মধ্যে দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সে সময় রিজার্ভ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “নির্বাচনের পরে বিদেশি ঋণ ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়তে থাকবে, ট্রেড ক্রেডিটও বাংলাদেশ পেতে থাকবে। ফলে যেটা হবে, আবার এটা (রিজার্ভ) পজিটিভ হবে। জুনের মধ্যে রিজার্ভ আবার বিল্ডআপ হতে শুরু করে করবে।”

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়াকেও ইতিবাচকভাবে দেখছেন অনেকে। অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমানের মতে, আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি আসায় সরাসরি রিজার্ভ পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। পরোক্ষভাবে অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আইএমএফ ঋণ দেওয়ায় অন্যান্য দাতা সংস্থা (বিশ্বব্যাংক ও এডিবি) থেকেও কিছু ঋণ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হিসেবে কাজ করবে। কারণ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে আস্থা ফেরাতে সহায়ক হবে।”

গত ১২ ডিসেম্বর আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮৯.৮৯ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করে। এর দুই দিন পর ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এ ডলার যোগ হয়। একই দিনে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণের ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। অন্যান্য উৎস থেকেও আরও রিজার্ভ জমা হয়।

বর্তমানে নিট রিজার্ভের পরিমাণ ২০.৬৮ বিলিয়ন ডলার। গত ১৪ ডিসেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯.১৬ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ, এডিবির ঋণসহ অন্যান্য উৎস থেকে ডলার যোগ হওয়ায় রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে।

চলতি ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সের পালে লেগেছে স্বস্তির হাওয়া। এ মাসের প্রথম ২২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৭ কোটি ১৩ লাখ ডলার। ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নভেম্বরের প্রথম ২৪ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৯ কোটি ২৯ লাখ (দৈনিক ৬ কোটি ২২ লাখ) মার্কিন ডলার। অক্টোবরের প্রথম ২৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৬ কোটি ৭১ লাখ (দৈনিক ৬ কোটি ১৭ লাখ) মার্কিন ডলার। আর সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ (দৈনিক ৪ কোটি ৪৮ লাখ) ডলার রেমিট্যান্স।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশে রপ্তানি আয় এসেছে ২,২২৩ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলারের। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৩% বেশি। এ সময়ে প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাত থেকে ১,৮৮৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের আয় পাওয়া গেছে।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-নভেম্বর সময়ে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি করে আয় করেছে ৪২.৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৪.৩৫% বেশি।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর মুখপাত্র ও পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, এ বছরের প্রথম ১১ মাসে ইউরোপে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২.২৮%, আর যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে ৯%। তবে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ২২.৫৩%।

তিনি বলেন, “২০২৪ সালটি কেমন যাবে, এটা বলা কঠিন। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় যায় সেটি দেখতে হবে। এর সঙ্গে সাপ্লাই চেইন, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি জড়িত। সেই সঙ্গে আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থিনীতিতেও কিছু চাপ তৈরি হয়েছে। আমরা যদি অভ্যন্তরীণ সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে পারি এবং বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারি- তাহলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবো।”

অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, বলছেন বিশ্লেষকেরা, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনের আগে অর্থনীতিতে নানা সংকট দেখা দেয়। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে এ সময় ব্যবসায়িক ক্ষতি ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়। অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্তও আটকে থাকে। ফলে অনিশ্চিয়তা থাকে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “নির্বাচনের আগে সব সময়ই অর্থনীতিতে সংকট থাকে, এবার এই সংকট অনেক বেশি। অর্থনীতির এই সংকট নিরসনে ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারে ছেড়ে দিতে হবে। সেটা হয়তো নির্বাচনের পর করতে হবে। ডলার সংকট ছাড়াও মূল্যস্ফীতি, সুদের হার এবং সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো সামলাতে যেসব বড় পদক্ষেপ দরকার, এগুলো নির্বাচনের পর নিতে হবে।”

সামগ্রিক অর্থনীতিতেও নির্বাচন ও রাজনীতির প্রভাব আছে। অনেক ক্ষেত্রে অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্বাচন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আটকে থাকে। যেটা নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে অর্থনীতিতে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার মনে করেন, নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ওপর আস্থা বাড়লে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে, বৈদেশিক ঋণের অর্থ ছাড় হবে এবং ডলারের রেট কমলে বাংলাদেশের শর্ট টার্ম ক্রেডিট ও ট্রেড ক্রেডিট বাড়লেই অর্থনীতিতে বাউন্স ব্যাক শুরু হবে।

অর্থনীতি কীভাবে ফিরবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রধান কারণ হলো আস্থা। বিদেশি পার্টের এফডিআই গত বারের তুলনায় নেগেটিভ হয়ে গেছে। কারণ সবাই নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে কী হয়, তা দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে। এখন কেউই বিনিয়োগ করতে আসছে না।”

আবদুর রউফ জানান, যেসব ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের সঙ্গে লোন সাইন হয়ে আছে, তাদের অর্থ ছাড় করার কথা। তারাও নির্বাচনের কারণে এখন অপেক্ষা করছে। আর এখন অবস্থা তো আরও খারাপ। হরতাল, অবরোধ চলছে। এই সময় বিদেশি কনসালটেন্টও আসবে না, টাকাও ছাড় করবে না।