যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২৮ দফা ইউক্রেন–রাশিয়া শান্তি পরিকল্পনা, ইউক্রেনের ২৪ দফা প্রস্তাব
যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফা ও এর বিপরীতে ইউক্রেনের ২৪ দফা শান্তি প্রক্রিয়ার বিস্তারিত।
১. ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত হবে।
২. রাশিয়া–ইউক্রেন–ইউরোপের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ অনাক্রমণ চুক্তি হবে।
৩. রাশিয়া প্রতিবেশী দেশে আক্রমণ করবে না; ন্যাটো আর সম্প্রসারিত হবে না।
৪. যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাশিয়া–ন্যাটো নিরাপত্তা আলোচনার নতুন কাঠামো গঠিত হবে।
৫. ইউক্রেন শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাবে।
৬. ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ৬ লাখে সীমাবদ্ধ থাকবে।
৭. ইউক্রেন সংবিধানে লিখে দেবে যে তারা ন্যাটোতে যোগ দেবে না; ন্যাটোও ইউক্রেনকে কখনো নেবে না।
৮. ন্যাটো ইউক্রেনে কোনো সেনা মোতায়েন করবে না।
৯. ইউরোপীয় ফাইটার জেট পোল্যান্ডে মোতায়েন থাকবে।
১০. যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টি, যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ পাবে। তবে ইউক্রেন যদি রাশিয়ায় আক্রমণ করে, গ্যারান্টি বাতিল। আর রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করলে—বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা ফিরে আসবে এবং ইউক্রেন যদি অকারণে মস্কো/সেন্ট পিটার্সবার্গে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে গ্যারান্টি বাতিল।
১১. ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদের অধিকার থাকবে।
১২. ইউক্রেনের পুনর্গঠনে বিশাল বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্যাকেজ: ক. প্রযুক্তি, ডেটা সেন্টার, AI—সব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ তহবিল। খ. যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের গ্যাস অবকাঠামো পুনর্গঠনে যুক্ত হবে। গ. যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল পুনর্গঠন। ঙ. অবকাঠামো উন্নয়ন, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন। চ. বিশ্বব্যাংকের বিশেষ অর্থায়ন।
১৩. রাশিয়ার বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পুনঃঅংশগ্রহণ: নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি, রাশিয়াকে G8-এ ফের আমন্ত্রণ।
১৪. বাজেয়াপ্ত (ফ্রোজেন) রুশ সম্পদের ব্যবহার: ১০০ বিলিয়ন ডলার ইউক্রেন পুনর্গঠনে যাবে, যুক্তরাষ্ট্র লাভের ৫০% পাবে, ইউরোপ অতিরিক্ত ১০০ বিলিয়ন যোগ করবে, বাকি রুশ সম্পদ ইউএস–রাশিয়া যৌথ বিনিয়োগ তহবিলে ব্যবহার হবে।
১৫. যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া যৌথ নিরাপত্তা কর্মদল গঠন।
১৬. রাশিয়া আইন করে ইউক্রেন–ইউরোপের বিরুদ্ধে অনাক্রমণ নীতি ঘোষণা করবে।
১৭. উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি (New START) নবায়ন করবে।
১৮. ইউক্রেন পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগের নীতি অব্যাহত রাখবে।
১৯. জাপোরিঝিয়া নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট IAEA–এর তত্ত্বাবধানে চলবে; বিদ্যুৎ ৫০:৫০ ভাগে রাশিয়া–ইউক্রেন পাবে।
২০. শিক্ষা ও সমাজে সহনশীলতা বৃদ্ধির প্রোগ্রাম: ইউক্রেন ধর্মীয় ও ভাষাগত সহনশীলতার ইইউ আইন মানবে, উভয় দেশ গণমাধ্যম ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য নিষিদ্ধ করবে, নাৎসিবাদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
২১. ভূখণ্ড: ক্রিমিয়া, লুহানস্ক, দোনেৎস্ক — ডি ফ্যাক্টো রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি (যুক্তরাষ্ট্রসহ)। খেরসন ও জাপোরিঝিয়া যুদ্ধরেখা (লাইন অব কন্ট্যাক্ট) অনুযায়ী “হিমায়িত” অবস্থা। রাশিয়া অন্যান্য অধিকৃত এলাকা ছাড়বে, দোনেৎস্কের একটি অংশ নিরস্ত্রীকৃত বাফার জোন হবে ও আন্তর্জাতিকভাবে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত।
২২. ভবিষ্যতে কেউ বলপ্রয়োগে সীমানা পরিবর্তন করতে পারবে না।
২৩. কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেন যেন সহজে শস্য রপ্তানি করতে পারে — রাশিয়া এতে বাধা দেবে না।
২৪. মানবিক কমিটি: সব যুদ্ধবন্দীর বিনিময় (all-for-all), সব নাগরিক বন্দী ও শিশু ফেরত, পরিবার পুনর্মিলন প্রোগ্রাম, যুদ্ধের শিকারদের সহায়তা।
২৫. ইউক্রেনে ১০০ দিনের মধ্যে নির্বাচন।
২৬. যুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সার্বিক ক্ষমা ও ভবিষ্যতে মামলা না করার প্রতিশ্রুতি।
২৭. চুক্তি আইনি বাধ্যবাধক; ট্রাম্পের নেতৃত্বে “Peace Council” নজরদারি করবে।
২৮. দুই পক্ষ সম্মত হলেই যুদ্ধবিরতি অবিলম্বে কার্যকর।
যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফার বিপরিতে ইউক্রেনে করা ২৪ দফা প্রস্তাব
১. যুদ্ধ বন্ধ ও স্থায়ী শান্তির ব্যবস্থা: যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে শেষ করে ভবিষ্যতে যেন আর যুদ্ধ না হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে।
২. পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি: আকাশে, স্থলে ও সমুদ্রে—দুই পক্ষই সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে।
৩. যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে আলোচনা: যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অংশগ্রহণে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ কীভাবে হবে, তা নিয়ে দুই পক্ষ অবিলম্বে আলোচনা শুরু করবে।
৪. যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ: উপগ্রহ, ড্রোনসহ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূর থেকে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রয়োজনে স্থলেও দল পাঠানো হবে।
৫. লঙ্ঘন যাচাইয়ের ব্যবস্থা: যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ জমা দেওয়া, তদন্ত করা ও সমস্যার সমাধানের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা গঠন করা হবে।
৬. রাশিয়া অপহৃত শিশু ফিরিয়ে দেবে: রাশিয়া অবৈধভাবে নেওয়া সব ইউক্রেনীয় শিশু নিঃশর্তভাবে ফেরত দেবে, এবং এটি আন্তর্জাতিক অংশীদাররা তদারকি করবে।
৭. বন্দী বিনিময় – “সবাইকে সবার বদলে” যুদ্ধবন্দীদের সম্পূর্ণ বিনিময় হবে। রাশিয়া সব বেসামরিক আটককেও ছেড়ে দেবে।
৮. যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল হলে মানবিক কার্যক্রম: পরিবার-আত্মীয়দের যোগাযোগ ও দেখা-সাক্ষাৎসহ মানবিক ব্যবস্থা চালু করা হবে।
৯. ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পুনঃনিশ্চিত: ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সম্পূর্ণভাবে স্বীকৃত থাকবে। তাকে জোর করে নিরপেক্ষ করা হবে না।
১০. যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা: ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশের কাছ থেকে “নেটো অনুচ্ছেদ ৫-এর মতো” সুরক্ষা গ্যারান্টি পাবে, যাতে ভবিষ্যতে হামলা ঠেকানো যায়।
১১. ইউক্রেনের সামরিক শক্তিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়: ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বা তাদের প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর কোনো সীমাবদ্ধতা থাকবে না।
১২. নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেবে বিভিন্ন দেশ: ইউক্রেন নিজেই ঠিক করবে কোন বন্ধু দেশ নিজের ভূখণ্ডে সেনা বা অস্ত্র মোতায়েন করতে দেবে।
১৩. ন্যাটো সদস্য হওয়া নির্ভর করবে ন্যাটোর সম্মতির ওপর: ন্যাটোতে যোগ দেবে কি না, তা ন্যাটোর সদস্যদের ঐক্যমতের ওপর নির্ভর করবে।
১৪. ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হবে: এই প্রস্তাবে ইউক্রেনকে পুরোপুরি ইইউ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা আছে।
১৫. ইউক্রেন পরমাণু অস্ত্রহীন রাষ্ট্র হিসেবেই থাকবে: পরমাণু অস্ত্র না রাখার চুক্তিতে (NPT) ইউক্রেন থাকবে।
১৬. ভূখণ্ডের প্রশ্ন পরে আলোচনায়: পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হলে এরপর ভূখণ্ড-সংক্রান্ত আলোচনা হবে।
১৭. বর্তমান ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ থেকে আলোচনা শুরু: যে অবস্থানে দুই পক্ষ এখন দাঁড়িয়ে আছে, সেখান থেকেই ভূখণ্ড আলোচনা শুরু হবে।
১৮. সমঝোতার পর বলপ্রয়োগ নয়: যে সীমান্তে দুই পক্ষ ঐক্যমতে পৌঁছাবে তা শক্তি ব্যবহার করে আর পরিবর্তন করা যাবে না।
১৯. জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র ইউক্রেন নেবে: যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র এবং কাখোভকা বাঁধের নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনকে ফেরত দেওয়া হবে।
২০. দিপ্রো নদীতে বাধাহীন চলাচল: ইউক্রেন দ্নিপ্রো নদী এবং কিনবার্ন স্পিট অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাবে।
২১. অর্থনৈতিক সহযোগিতা: ইউক্রেন ও তার সহযোগীরা কোনো বাধা ছাড়াই অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে।
২২. যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন: ইউক্রেনকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠন করা হবে এবং ক্ষতিপূরণ রাশিয়ার সম্পদ দিয়ে দেওয়া হবে — এসব সম্পদ ফ্রিজ/জব্দ অবস্থায় থাকবে যতক্ষণ রাশিয়া ক্ষতিপূরণ না দেয়।
২৩. রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে: শান্তি স্থায়ী হলে ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে কিছুটা তুলে নেওয়া হতে পারে। কিন্তু লঙ্ঘন করলে নিষেধাজ্ঞা আবার সঙ্গে সঙ্গে ফিরবে।
২৪. ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে আলাদা আলোচনা: সমস্ত OSCE সদস্যদের নিয়ে ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কাঠামো নিয়ে আলাদা আলোচনা শুরু হবে।
নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক