সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেরা ১০ শিক্ষা বৃত্তি: এভিয়েশন–মেডিকেলে পড়াশোনার সুযোগ
মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠছে। দেশটির অনেক উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন জরিপে জায়গাও করে নিচ্ছে। বিদেশি ও দেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল ফান্ডেড বৃত্তি দেয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। বিদেশি শিক্ষার্থী যারা আরব আমিরাতে উচ্চশিক্ষার পড়ার স্বপ্ন দেখেন তাদের জন্য ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ১০টি বৃত্তি (পূর্ণ-ফান্ডেড ও আংশিক-ফান্ডেড) তথ্য দেওয়া হলো।
এসব বৃত্তি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে (যেমন—স্টেম, ব্যবসা, মানববিদ্যা) উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়। বৃত্তি প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে অংশ-ফান্ডেড এবং পুরোপুরি-ফান্ডেড ধরনের বৃত্তি, যা শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফ বা অন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) আধুনিক অবকাঠামো, বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং উন্নত প্রযুক্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিচিত। এসব কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় পড়াশোনার গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে দেশটি।
১. এমবিজেডইউএআই স্কলারশিপ—
মোহাম্মদ বিন জায়েদ ইউনির্ভাসিটি অব আর্টফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এমবিজেডইউএআই) বৃত্তিটি পূর্ণ ফান্ডেড। পড়াশোনার প্রায় সব খরচ মেলে এ বৃত্তিতে। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামে মাসে মাসে মিলবে হাত খরচ। ডেডলাইন: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
বৃত্তির সুবিধা: শিক্ষার্থীরা পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ পাবেন। মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের মাসিক ভাতা হবে ১৫ হাজার দিরহাম এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য ১৭ হাজার ৫০০ দিরহাম (১ দিরহাম সমান ৩৩ টা ২৬ পয়সা)। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের খরচ এই ভাতার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। স্বাস্থ্যবিমা প্রদান করা হবে। ইউএই ভিসা স্পনসরশিপের সুবিধা থাকবে।
২. খলিফা ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ ইন ইউএই ২০২৫: এই বৃত্তিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। নেই কোনো আবেদন ফি। ফুল ফান্ডেড এই বৃত্তিতে পড়ার খরচ নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না শিক্ষার্থীদের। টিউশন ফি মওকুফ, মেডিকেল ইনস্যুরেন্স, আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণের সহায়তাসহ মাসিক ভাতাও পাবেন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউএই-এর অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। খলিফা ইউনিভার্সিটিতে আংশিক ফান্ডেড বৃত্তিও দেওয়া হয়, যা বৃত্তির স্তর অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
৩. আবুধাবি ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ ইন ইউএই ২০২৫-২৬: আবুধাবি বিশ্ববিদ্যালয় (এডিইউ–ADU) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণ ও আংশিক বৃত্তি প্রদান করে। এই বৃত্তিতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক রেকার্ড ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে মূল্য দেয়। এর লক্ষ্য হলো প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া এবং ইউএই-এর শিক্ষার মান উন্নয়ন করা।
৪. ইউএই ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ২০২৫: সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণ ও আংশিক বৃত্তি দিচ্ছে। বৃত্তিটি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং এতে টিউশন ফি-এর ৭৫% বা ৫০% পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়। যেসব শিক্ষার্থী মাধ্যমিকে ভালো ফল করেছে, তারা পূর্ণ টিউশন ফি-এর বৃত্তি পেতে পারে।
৫. এমিরেটস অ্যাভিয়েশন ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ: বিমানবিষয়ে আগ্রহীদের জন্য এমিরেটস অ্যাভিয়েশন ইউনিভার্সিটি অসাধারণ সুযোগ দিচ্ছে। এটি এমিরেটস গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং বিমানচালনা-সংক্রান্ত উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানে বিশেষায়িত। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এখানে তাদের স্বপ্নের পেশা গড়ে তুলতে পারবেন।
৬. জায়েদ ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ ইন ইউএই: ইউএই-এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামে প্রতিষ্ঠিত জায়েদ ইউনিভার্সিটি সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনে উৎসাহ দিতে পূর্ণ ও আংশিক বৃত্তি দেয়।
এতে শিক্ষার্থীরা আর্থিক সহায়তা ও ভাতা পেয়ে পড়াশোনার খরচ সহজে বহন করতে পারে।
৭. আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন দুবাই স্কলারশিপ: আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন দুবাই (এইউডি–AUD) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ব্যবসা, স্থাপত্য ও প্রকৌশল বিষয়ে পূর্ণ ফান্ডেড বৃত্তি দিচ্ছে। বৃত্তিটি নেতৃত্বগুণ,একাডেমিক কৃতিত্ব ও সামাজিক অবদানের ওপর ভিত্তি করে প্রদান করা হয়।
৮. বোহেরিঙ্গার ইনগেলহেইম ফান্ডস এমডি ফেলোশিপ ২০২৫: চিকিৎসা গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য এই ফেলোশিপ একটি বড় সুযোগ। এতে মাসিক ভাতা, ভ্রমণ ভাতা, ব্যক্তিগত পরামর্শ এবং বৈশ্বিক ফেলো ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্কে যোগদানের সুযোগ থাকবে।
৯. কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি দুবাই স্কলারশিপ: কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি দুবাই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একাধিক বৃত্তি দিচ্ছে। প্রত্যেক বৃত্তির শর্ত ও অর্থায়ন ভিন্ন ভিন্ন।
১০. মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভস স্কলারশিপ: এ বৃত্তিগুলো শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নেও অবদান রাখে। এ প্রোগ্রামের সর্বোচ্চ ১০০ শতাশ টিউশন ফি কভার করা হয়, বাকি খরচ আবেদনকারীকেই বহন করতে হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের এসব বৃত্তি শুধু অর্থনৈতিক সহায়তাই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন, একাডেমিক উৎকর্ষতা ও সমাজে অবদান রাখার পথ তৈরি করে। প্রযুক্তি, বিমানচালনা, চিকিৎসা বা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে চাইলে এসব বৃত্তিই হতে পারে ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। পূর্ণ বা আংশিক ফান্ডেড যেকোনো ইউএই স্কলারশিপ বেছে নিয়ে আপনি গড়ে তুলতে পারেন নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।
সৌজন্যে: প্রথম আলো
নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক