সিআইএ’র নতুন প্রযুক্তি যুদ্ধ AR ও VR-এর গোপন অস্ত্র
বিশ্বজুড়ে গুপ্তচরবৃত্তির জগৎ দিন দিন প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। আধুনিক কৌশলের এই নতুন অধ্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ (CIA) এখন এমন এক বিপ্লব ঘটাচ্ছে, যা বাস্তব আর ডিজিটাল দুনিয়ার সীমানাকে প্রায় মুছে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক জিওপলিটিক্স প্রাইম এর এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, সিআইএ Augmented Reality (AR) ও Virtual Reality (VR) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন সব ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করছে, যা বাস্তব শহরের নিখুঁত কপি।
এই প্রযুক্তি শুধু প্রশিক্ষণের জন্য নয়, বরং সাইবার যুদ্ধ, গুপ্ত অভিযান, এমনকি হত্যার প্রস্তুতি নিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ডিজিটাল টুইন – বাস্তবের কপি: সিআইএ-র বিজ্ঞানীরা বাস্তব শহরগুলোর “ডিজিটাল টুইন” বা সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল সংস্করণ তৈরি করছেন। এই ডিজিটাল শহরগুলো এতটাই বাস্তবসম্মত যে সেখানে সময়ের পরিবর্তন, আবহাওয়ার অবস্থা, এমনকি জনসমাগমের গতিবিধিও ঠিক বাস্তবের মতো দেখা যায়।
এতে করে এজেন্টরা যেকোনো দেশ বা শহরে প্রবেশের আগে সেখানকার প্রতিটি রাস্তা, ভবন ও ভূগর্ভস্থ পথ সম্পর্কে আগেই ধারণা পেতে পারেন।
VR সিমুলেটর: ভার্চুয়াল যুদ্ধক্ষেত্র: Virtual Reality (VR) ব্যবস্থায় সিআইএ এমন প্রশিক্ষণ পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে পুরো শহরই এক বিশাল গেমের মতো বাস্তব লাগে।
এই সিমুলেটরে দিন-রাত ও আবহাওয়ার পরিবর্তন যুক্ত থাকে, সাধারণ নাগরিকদের চলাফেরাও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্বারা অনুকরণ করা হয়। এজেন্টরা শেখে কিভাবে ভবনে প্রবেশ করবে, কীভাবে বিপদে উদ্ধার অভিযান চালাবে, অথবা নজরদারি এড়িয়ে চলবে।
এইভাবে তৈরি “ভার্চুয়াল যুদ্ধক্ষেত্র” সিআইএ-র এজেন্টদের বাস্তব অপারেশনের আগে নিখুঁতভাবে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে।
AR সিস্টেম: বাস্তবে ডিজিটাল ছোঁয়া: Augmented Reality (AR) প্রযুক্তির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের এজেন্টরা তাৎক্ষণিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারেন। মুখ চিনে তা সঙ্গে সঙ্গে গোপন ডাটাবেসে মিলিয়ে দেখা হয়। চারপাশে কোথায় ক্যামেরা বা নজরদারি আছে তা বিশ্লেষণ করে এড়ানোর রুট দেখায়। ভবনের নকশা, সুড়ঙ্গ বা গোপন প্রবেশপথ বাস্তব দৃশ্যের ওপর ওভারলে করে দেখায়। সেন্সর ও ক্যামেরা ডেটা বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য বিপদ আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়।
এর ফলে এক এজেন্ট বাস্তব দুনিয়াতেই যেন এক ডিজিটাল যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করছেন — চোখে হেডসেট, হাতে বাস্তব অস্ত্র, আর পাশে AI সহযোগী।
কারা দিচ্ছে প্রযুক্তিগত সহায়তা: এই পুরো প্রোগ্রামে সিআইএ একা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্টরা এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
Palantir দিচ্ছে ডেটা বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম, যা পুরো সিস্টেমের ডিজিটাল মস্তিষ্ক।
Microsoft সরবরাহ করছে Azure ক্লাউড সার্ভার ও HoloLens হেডসেট, যা সিস্টেমের “স্নায়ুতন্ত্র”,
Lockheed Martin তৈরি করছে বাস্তবমুখী ট্রেনিং সিমুলেটর ও ভার্চুয়াল পরিবেশ, যা এই প্রকল্পের “বাস্তব নির্মাতা” হিসেবে কাজ করছে।
ফলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সিআইএ এক নতুন গোয়েন্দা যুগের সূচনা করেছে যেখানে তথ্য, প্রযুক্তি, ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একসঙ্গে কাজ করছে। তবে এটি শুধু প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, বরং ভবিষ্যতের নৈতিক প্রশ্নও তুলছে: কত দূর পর্যন্ত “নিরাপত্তা”র নামে বাস্তব ও ভার্চুয়াল দুনিয়ার সীমানা লঙ্ঘন করা যায়?
এই নতুন যুগের সাইবার যুদ্ধ হয়তো বন্দুকের শব্দে নয়, বরং এক নিঃশব্দ ডিজিটাল বাস্তবতায় ঘটছে যেখানে প্রতিটি পিক্সেল হতে পারে এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র।
নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক