সিডনি হারবার ব্রিজে ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল করে ইতিহাস গড়ল অস্ট্রেলিয়া

ফিলিস্তিনের সমর্থনে আজ রোববার অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজের ওপর হাজারো মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

মিছিলে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জও অংশ নেন। গতকাল বিক্ষোভের ছবিতে অ্যাসাঞ্জের পাশে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নিউ সাউথ ওয়েলসের সাবেক নেতা বব কার।

গাজায় অপুষ্টি ও খাদ্যসংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও সমালোচনা জোরালো হচ্ছে। এমন অবস্থায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডা বলেছে, তারা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে। কেউ কেউ অবশ্য শর্তসাপেক্ষে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছে। অস্ট্রেলিয়া সরকার গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকলেও তারা এখনো স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। গত মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়া আরও এক ডজনের বেশি দেশের সঙ্গে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে। দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছে তারা।

গতকাল বিক্ষোভকারীরা প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সিডনি হারবার ব্রিজে মিছিল করে। তারা স্লোগান দিতে থাকে ‘এখনই যুদ্ধবিরতি চাই’ এবং ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’।

‘মার্চ ফর হিউম্যানিটি’আয়োজকদের ডাকা সিডনির মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজন ক্ষুধার প্রতীক হিসেবে ‘হাঁড়ি-পাতিল’ বহন করছিলেন।

রাজ্যের প্রধান ও নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ শহরের ‘প্রতীক’ হিসেবে পরিচিত সেতুটিতে মিছিল আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে রাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট শনিবার রায় দেয়, মিছিলটি এগিয়ে যেতে পারে।

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ বলেছে, বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সিডনি শহরজুড়ে তারা কয়েক শ’ অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করেছে।

নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে বামপন্থী গ্রিনস পার্টির সিনেটর মেহরিন ফারুকি সিডনির ল্যাং পার্কে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, এই মিছিল ‘ইতিহাস সৃষ্টি করবে’। তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।

মেহরিন ফারুকি অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজাবাসীর ওপর ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। এ ছাড়া তিনি নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস মিন্সের সমালোচনা করেন। কারণ, মিন্স বলেছিলেন, এই বিক্ষোভ-মিছিল করাটা ঠিক হবে না। আজ মিছিলে অংশ নেওয়া অনেকের হাতে ছিল ব্যানার। ওই সব ব্যানারে ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর নিহত হওয়া হাজারো ফিলিস্তিনি শিশুর নাম লেখা ছিল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার জবাবে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টির আইনপ্রণেতা এড হুসিকও মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন সরকারকে আহ্বান জানান।

মেলবোর্নেও একই সময়ে একই ধরণের প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানের ব্যাপক পুলিশ উপস্থিত ছিল।

অন্যদিকে, এদিনই গাজা দখল করে সেখানে ইসরাইলের সম্পূর্ণ সার্বভৌম প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইটামার বেন-গাভির।

জেরুজালেমে একটি বিতর্কিত জায়গায় রোববার এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেছেন ইটামার।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। রক্তপাত বন্ধ করতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে দেশটিতে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। ওই সময় হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হিসাব অনুসারে, এখনো ৪৯ জন গাজায় আটক আছে। এর মধ্যে ২৭ জন মারা গেছে বলে দাবি তাদের।

প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সিডনি হারবার ব্রিজ ১৯৩২ সালে চালু হয়। এর দু’টি বাঁকানো অংশ সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। এটিকে এখন সিডনি আর অস্ট্রেলিয়ার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নিউজ টুডে বিডি/ নিউজ ডেস্ক