
ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার ১২ দিন পর অবশেষে রোববার খুলছে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। গত ২১ জুলাই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর থেকেই বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। গত ২৭ জুলাই খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শোক ও শিক্ষার্থীদের মানসিক সহায়তার জন্য ছুটি আরও বাড়ানো হয়। তবে, প্রথম দিন কোনো নিয়মিত ক্লাস বা পরীক্ষা হবে না। নিহতদের স্মরণে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
মাইলস্টোন কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল শনিবার গণমাধ্যমকে জানান, “২১ জুলাইয়ের দুর্ঘটনার পর পুরো ক্যাম্পাসটি গভীর শোক ও বেদনাভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আমরা কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ দিতে চাই না। বরং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
তিনি জানান, আজ রোববার থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কলেজে এসে শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করতে পারবে, পারবে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে। পাঠ্যপুস্তক নয়, বরং অনুভূতির আদান-প্রদানই হবে আজকের দিনটির প্রধান উপজীব্য। এই মানবিক উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তি ফিরে পাওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
শাহ বুলবুল আরও জানান, “শনিবার যেভাবে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে, ঠিক একইভাবে রোববারও তা অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রার্থনা ও সমবেদনার এই পরিবেশ শিক্ষার্থীদের মনের ভার কিছুটা হলেও হালকা করতে সাহায্য করবে।”
এছাড়া কলেজ ক্যাম্পাসেই বিমান বাহিনীর সহায়তায় চালু রাখা হয়েছে একটি অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প। এখানে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। যারা দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন কিংবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, তাদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আজ কোনো ধরনের পাঠদান হবে না। কারণ, বই-খাতার আগে এখন প্রয়োজন মানুষের পাশে দাঁড়ানো, একজন আরেকজনের হাত ধরা। অনেক শিক্ষার্থীর প্রিয় বন্ধু বা সহপাঠী চিরতরে হারিয়ে গেছে। অনেকে এখনও আঘাত ও আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন। এসব বিবেচনায় রেখেই শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আবেগের পুনর্মিলনী’ আয়োজন করা হয়েছে।
মাইলস্টোন কলেজ শুধু পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা নয়, মানবিক শিক্ষারও এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে। ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংগঠিত পুনর্বাসন কার্যক্রম, দোয়া মাহফিল, চিকিৎসা সহায়তা এবং আজকের মতো মানবিক পুনর্মিলনী আয়োজন প্রমাণ করে—এই প্রতিষ্ঠান কেবল ক্লাসরুমেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক মানবিক সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আজকের দিনটি হয়তো পাঠ্যসূচির কোনো অধ্যায় নয়, তবে জীবনের পাঠশালায় এটি একটি স্মরণীয় শিক্ষা। যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিবার ও প্রতিষ্ঠান সবাই একে অপরের পাশে দাঁড়ায়, একসঙ্গে শোক ভাগ করে নেয়, এবং ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে জীবনের নতুন ভোরের দিকে। মাইলস্টোন কলেজের এই উদ্যোগ এ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
নিউজ টুডে বিডি/ নিউজ ডেস্ক