
আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসন কুমিল্লা-১১ তে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন নিয়ে চলছে ঠান্ডা লড়াই। এ আসনের বর্তমান এমপি মুজিবুল হক চারবারের এমপি। এ আসন থেকে এমপি হওয়ার পাশাপাশি তিনি পুরো মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্তমান সংসদ সদস্যকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত থাকলেও এবার এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন আরও তিন নেতা। এর বাইরে ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসে সাবেক একজন সচিবের নাম। সব মিলিয়ে এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের কান্ডারি হতে প্রতিযোগিতায় আছেন অন্তত তিন হেভিওয়েট নেতা।
জানা গেছে, এবার এ আসনে আবারও মনোনয়ন আশা করেন বর্তমান সংসদ সদস্য মুজিবুল হক। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এই রেলমন্ত্রী জেলার একজন তারকা নেতা হলেও বর্তমান কেবিনেটে না থাকায় অনেকটাই আড়ালে চলে যেতে হয়েছে তাকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবার এ আসনে মুজিবুল হকের জায়গা দখল করতে চান অন্য প্রার্থীরা। অন্য নেতাদের মনোনয়ন চাওয়ার যুক্তি হিসেবে যে আলোচনাগুলো সামনে আসছে তার অন্যতম হচ্ছে মুজিবুল হকের বয়স। সত্তরোর্ধ্ব এই নেতা রাজনৈতিকভাবে অক্ষম দাবি করা হলেও মানতে নারাজ তার অনুসারী নেতারা। তারা মনে করছেন, এই বয়সে এসেও মুজিবুল হক অনেক বেশি মনোবল নিয়ে রাজনীতি করছেন, সেই সঙ্গে জেলার নেতৃত্বও দিচ্ছেন সুচারুভাবে। তাই বয়স হয়েছে এমন যুক্তি রাজনীতির মাঠে খাবে না।
মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্য নেতারা হলেন- দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দায়িত্ব পালনকারী এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুস সোবহান ভূঁইয়া হাসান, আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য আলহাজ এম তমিজ উদ্দিন ভূঁইয়া সেলিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদ্য সাবেক পৌর মেয়র মো. মিজানুর রহমান।
কুমিল্লার এ আসনটি বিভিন্ন কারণে বেশ আলোচিত। বিশেষ করে জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ৪৬ কিলোমিটার মহাসড়ক এ আসনটির ওপর দিয়ে গেছে। সংগত কারণে এ আসনটি দেশব্যাপী অধিক পরিচিত। একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলাটিতে বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ মানুষের বসবাস। নারী-পুরুষ ভোটার সংখ্যা মোট প্রায় ৪ লাখ ২৩ হাজার ৪১৫ জন ও ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১০৭টির অধিক।
জানা গেছে, এই মনোয়নপ্রত্যাশী নেতারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নামে নৌকার বরাদ্দ পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দলের কেন্দ্রে দৌড়াদৌড়ির পাশাপাশি মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠ গোছানো থেকে আরম্ভ করে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গিয়ে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন তারা। অন্য দিকে হিসাবের পুরাতন খাতা পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে কেন্দ্রে ধর্ণা দিচ্ছেন তিন হেভিওয়েট প্রার্থী। তাদের আশা দলের দুর্দিনে যারা নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন এবার তারা নৌকার টিকিট পাবেন। এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মাঠ গোছানোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়ে রেখেছেন এই প্রার্থীরা। অন্যদিকে উন্নয়নের রূপকারখ্যাত মুজিবুল হকের পাশাপাশি জোট সরকারের বিরুদ্ধে সব আন্দোলন সংগ্রামে যারা মাঠে ছিলেন তারাও আশা ছাড়তে চান না।
নিজের মনোনয়নের ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুস সোবহান ভূঁইয়া হাসান বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠন করতে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি পালন করে বিএনপি জামায়াতের অগ্নি তৎপরতা রুখে দিতে বদ্ধপরিকর। দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, দলের জন্য কাজ করছি। আশা করি মনোনয়ন বদল হলে দল আমার বিষয়টি বিবেচনা করবে।