
শনিবার রাতে এবং রোববার বিকেলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড় ও বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া ছিল বেশ স্বস্তিদায়ক। তাপমাত্রাও ছিল কম। এমন আবহাওয়ার মধ্যেও দেশের তিন জায়গায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তীব্র গরম শুরুর আগেই এভাবে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তিনটি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকার বনানীতে একটি, নারায়ণগঞ্জে একটি ও মুন্সীগঞ্জের একটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া কাঁচাবাজারে আগুন লাগে রোববার ভোরে। পরে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ করে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া কাঁচাবাজারের আগুনে দুই শতাধিক দোকান পুড়েছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
অন্যদিকে বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার লিমা খানম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন লাগার খবর আসে। খবর পেয়ে ফায়ার স্টেশন থেকে মোট ৮ ইউনিট রওনা হয়। পরবর্তীতে আরও ৪ ইউনিট যোগ দিয়ে মোট ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’
এই ঘটনায় আগুনে ৪০-৫০টির মতো ঘর পুড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আক্তারুজ্জামান। আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আগুনের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো সেভাবে জানা যায়নি। তবে আমাদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তারা সম্পূর্ণ তথ্য জানাবে। অনেক ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরগুলোতে থাকা আসবাবপত্র, নগদ টাকা ও অন্য মালামাল আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেই ভস্মস্তূপের ওপর বসেই চোখের জল ফেলছেন সেখানকার বাসিন্দারা। আগুনে সব হারিয়ে তারা স্তব্ধ হয়ে গেছেন।
সেখানে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোতে নিজেদের কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে কি না, অনেকে তা খুঁজে দেখছেন। কেউ কেউ ঘর থেকে লোহার দা ও বঁটি বের করছিলেন। অনেকে আধাপোড়া মালপত্রও বাইরে বের করেন।
কড়াইল বস্তির বাসিন্দা জানান, হঠাৎ ‘আগুন আগুন’ চিৎকার শোনার পর দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। বাইরে বেরিয়ে দেখি বাতাসের সঙ্গে আগুন দ্রুত আমাদের ঘরের দিকে চলে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের নিয়ে দৌড়ে দূরে সরে যাই। আগুনে সব পুড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কিছু রক্ষা করতে পারেনি।
প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও হতাহতের কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে আজ দুপুর ১টার দিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় টি.কে. গ্রুপের মালিকানাধীন সুপার বোর্ড কারখানার আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
আজ রাত ১০টায়ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করেছে। কারখানার ভেতরে তখনও পুড়ছে পাটখড়ি। ফায়ার সার্ভিস জানায়, পুরোপুরি আগুন নেভাতে আরও সময় লাগবে।
আগুন নেভাতে গিয়ে অন্তত সাতজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত সাতজনের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন: ইসমাইল, শরীফুল ও হিরণ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুর ১টার দিকে প্রতিষ্ঠানটির পাটের গোডাউনে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখান থেকে আগুন নদীতে নোঙর করে রাখা একটি পাটখড়ি বোঝাই ট্রলারে লেগে যায়। প্রথমে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পার্টিকেল বোর্ড, পাটখড়ি, প্লাস্টিকের দরজা ও প্লাস্টিকের পাইপের মতো দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে সরু রাস্তা আর পানির অভাবে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।
ঢাকা বিভাগ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘দুপুর ১টা ১২ মিনিটে আমরা অগ্নিকাণ্ডের খবর পাই। প্রথমে আমাদের গজারিয়া স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আরও ১০টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। বিকেল ৪টার দিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিশেষ ফোম টেন্ডার এবং রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং রোবট নিয়ে যাই আমরা। আমাদের বারোটি ইউনিট কাজ করে।
তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ আগুনের কারণ উদঘাটনে জেলা প্রশাসন ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানা যায়।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কী কারণে, কীভাবে আগুন লেগেছে বা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানা যায়নি। ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।’