
হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত: তেল আবিবের হামলা চলছেই, নিহত বেড়ে ৩০
গাজায় ১৫ মাসের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হামাস এবং ইসরাইল একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, বেশ লম্বা সময় আলোচনার পর এ চুক্তিতে পৌঁছেছে উভয় পক্ষ। এ আলোচনায় অন্যতম মধ্যস্থতাকরী দেশ ছিল কাতার। আগামী সপ্তাহের রোববার থেকে কর্যকর হবে এই যুদ্ধবিরতি।
কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতির কথা শুনে উল্লাসে মেতেছেন গাজাবাসী। তবে বন্ধ হয়নি ইসরাইলি হামলা। উপত্যকাটির খান ইউনিস এবং নুসেইরাত শরণার্থী ক্যাম্পসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। বৃহস্পতিবার আল জাজিরা বলছে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যেই এ হমালা চালিয়েছে তারা। এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বুধবারও ইসরাইলের হামলায় ৮২ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এক্ষেত্রে শরণার্থী শিবিরগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সের সদস্যরা।
আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে পৃথক বৈঠকের পর উভয় পক্ষ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। যুদ্ধবিরতির খবর জানার পর গাজায় ফিলিস্তিনিদের অনেককে রাস্তায় উল্লাস করতে দেখা গেছে। বিবিসির গাজা সংবাদদাতা রুশদি আবুআলুফ বলছেন, এই চুক্তির ফলে গাজা শহর এবং দক্ষিণ গাজা থেকে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা এখন তাদের নিজেদের ঘরে ফিরে যেতে পারবেন। ফিলিস্তিনিদের জন্য চুক্তির অন্যতম দিক হলো, এর ফলে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ছয়শ ট্রাক ত্রাণ এবং চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশ করতে দেয়া হবে। গাজায় অবশিষ্ট হাসপাতালগুলোকে সচল রাখতে ৫০ টি জ্বালানি ভর্তি লরিও পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন- এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিজয়ের কারণে। এর আগে তার সামাজিক মাধ্যম, ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, মধ্যপ্রাচ্যে জিম্মিদের জন্য আমরা একটি চুক্তি করছি। তারা খুব দ্রুতই মুক্তি পাবে। চুক্তির আওতায় হামাস ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে। বিবিসি ভেরিফাইয়ের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর জিম্মি করা ২৫১ জনের মধ্যে ৯৪ জন এখনো গাজায় রয়েছে। এদের মধ্যে ৬০ জন এখনো জীবিত এবং ৩৪ জন মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেরুজালেম থেকে গণমাধ্যমটির সংবাদদাতা জোনাহ ফিশার জানিয়েছেন, কয়েকটি পর্যায়ে এই চুক্তিটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে। এ সময়ে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে। প্রতিজন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে ইসরাইল বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে ঢুকে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে ১২০০ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরাইল। এছাড়া সেসময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে গাজায় শুরু হয় ইসরাইলি তাণ্ডব। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে তারা। এসব হামলায় গত ১৫ মাসে ৪৬ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।