
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাত অবসানে হোয়াইট হাউসে একটি শান্তি চুক্তি হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষর শেষে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান করমর্দন করেন। এই মুহূর্তকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন রুট উন্মুক্ত করবে এবং ওই অঞ্চলে আমেরিকান প্রভাব বাড়িয়ে তুলবে।
চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান সব ধরনের যুদ্ধ চিরতরে বন্ধ করার পাশাপাশি ভ্রমণ, বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আজ আমরা ককেশাসে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছি। আমরা বহু বছরের যুদ্ধ, দখলদারিত্ব ও রক্তপাত বন্ধ করেছি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, তারা ৩৫ বছর ধরে লড়াই করছে, এখন তারা বন্ধু এবং দীর্ঘদিন তারা বন্ধু থাকবে।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ান এই চুক্তি স্বাক্ষরকে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি আরো বলেন বলেন ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য।
ঘোষণার মূল পয়েন্টগুলো:
১/ দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শান্তি ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তিতে সম্মত হন; দ্রুত স্বাক্ষর ও অনুমোদনের আহ্বান।
২/ OSCE-এর মিনস্ক প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য যৌথ আবেদন স্বাক্ষর এবং সব অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান।
৩/ যোগাযোগ ও পরিবহন উন্মুক্তকরণে সম্মতি—আজারবাইজান ও নাখচিভান অঞ্চলের মধ্যে আর্মেনিয়ার ভেতর দিয়ে অবাধ সংযোগসহ আর্মেনিয়ার জন্যও পারস্পরিক লাভজনক রুট।
৪/ আর্মেনিয়াতে “Trump Route” (TRIPP) প্রকল্প বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র ও নির্ধারিত তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করবে আর্মেনিয়া।
৫/ জাতিসংঘ সনদ ও ১৯৯১ আলমাটি ঘোষণার ভিত্তিতে শত্রুতার অবসান ও সীমান্ত অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত; প্রতিশোধমূলক যে কোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান।
৬/ বৈঠককে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আঞ্চলিক শান্তির শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে অভিহিত।
৭/ ট্রাম্পের আতিথেয়তা ও শান্তি প্রক্রিয়ায় অবদানের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
মার্কিন মধ্যস্থতায় আর্মেনিয়া–আজারবাইজান শান্তি চুক্তির প্রধান দিকগুলো
★ Zangezur Corridor
১/ আর্মেনিয়ার ভেতর দিয়ে ২০-মাইল করিডর, যা আজারবাইজানকে নাখচিভানের সঙ্গে যুক্ত করবে।
২/ যুক্তরাষ্ট্র ৯৯ বছরের জন্য একচেটিয়া উন্নয়ন অধিকার পাবে; নাম “Trump Route”।
★ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ:
১/ দুই দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি, সীমান্ত নির্ধারণ কাজ, ও দূতাবাস স্থাপন পরিকল্পনা।
২/ যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ।
৩/ আজারবাইজানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
৪/ আর্মেনিয়ার পশ্চিমা সামরিক জোটের দিকে ঝোঁক।
★ জাতিগত ও মানবিক বিষয়:
১/ কারাবাখের জাতিগত আর্মেনিয়ানদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও প্রত্যাবর্তনের সুযোগ।
২/ অসম্পূর্ণ/চলমান ইস্যু,সীমান্ত চিহ্নিতকরণ।
৩/ বন্দি বিনিময়।
৪/ চুক্তি বাস্তবায়ন ও নজরদারি ব্যবস্থা।
★ ভূরাজনৈতিক প্রভাব:
১/ রাশিয়ার প্রভাব কমবে।
২/ যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের আঞ্চলিক ভূমিকা আরও শক্তিশালী হবে।
উল্লেখ্য বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের ভেতরে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী ওই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
ইতিমধ্যে নাগোরনো-কারাবাখ ঘিরে দুই প্রতিবেশী আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া অন্তত দুবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথমবার যুদ্ধে জড়ায় দেশ দুটি।
সাবেক সোভিয়েত এ দুই রাষ্ট্র বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে ২০২০ সালে ফের প্রাণঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
নিউজ টুডে বিডি/ নিউজ ডেস্ক