
পালান্টির: আমেরিকার নজরদারির গোপন হাতিয়ার
আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যাংক—সবাই এখন নির্ভর করছে একটি সফটওয়্যার কোম্পানির ওপর। এর নাম পালান্টির। কোম্পানিটির বর্তমান মূল্য প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার, অথচ সাধারণ মানুষ এর নামও খুব একটা শোনেনি।
পালান্টির কী
প্যালান্টির গথাম হল একটি গোয়েন্দা সরঞ্জাম যা অনেক দেশের পুলিশ ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পুলিশিং সিস্টেম হিসাবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায় (ইউএসআইসি) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ সহ সামরিক বাহিনী এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিশ্লেষকদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। ফোনকল, ইমেইল, ব্যাংকের হিসাব, সিসিটিভি ফুটেজ, পুলিশের তথ্য—সব একত্র করে বিশ্লেষণ করে। এভাবে সে লুকানো যোগসূত্র বের করে এবং মানুষের ভবিষ্যৎ আচরণও অনুমান করে।
প্রাথমিক ইতিহাস
প্যালান্টির টেকনোলজিস ইনকর্পোরেটেড একটি আমেরিকান পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যা ডেটা মাইনিংয়ের জন্য সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্মে বিশেষজ্ঞ। এটি ২০০৩ সালে সালে পিটার থিয়েল, স্টিফেন কোহেন, জো লোনসডেল এবং অ্যালেক্স কার্প দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
কোম্পানির চারটি প্রধান অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে: প্যালান্টির গথাম, প্যালান্টির ফাউন্ড্রি, প্যালান্টির অ্যাপোলো এবং প্যালান্টির এআইপি।
কিভাবে শুরু হলো?
২০০৩ সালে ৯/১১ হামলার পর প্রতিষ্ঠিত হয়, এর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শুরুতে অর্থ দিতে রাজি হননি। প্রথম অর্থায়ন হিসেবে ২ মিলিয়ন ডলার আসে সিআইএ থেকে। প্রথম গ্রাহকও ছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাই।
প্রধান ব্যবহার
গথাম: এই সফটওয়ারটি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জন্য। সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করে, টার্গেট মুহূর্তে নজরে আনে। ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজতেও এটি ব্যবহার করা হয়েছিল।
ফাউন্ড্রি
সরকার ও কোম্পানির জন্য। অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, পরিবহনসহ সব তথ্য একত্রিত করে। উদাহরণ স্বরুপ, সিমুলেশন চালিয়ে এয়ারবাস বিমানের ত্রুটি আগে থেকে ধরে ফেলে, ফেরারি গাড়ি রেসের কৌশল ঠিক করে, হাসপাতাল ও রোগীর চাহিদা পূর্বানুমান করে।
বিতর্কিত দিক
২০১২ সালে কোনো অনুমতি বা তদারকি ছাড়াই নিউ অরলিন্সে পুলিশকে সাহায্য করে সম্ভাব্য “ভবিষ্যৎ অপরাধী” চিহ্নিত করতে।
ধনকুবের জেপি মরগ্যান এটা নিজের কর্মীদের উপর গোপন নজরদারি চালিয়েছিল। তাদের ইমেইল, কল, অফিসে প্রবেশ, এমনকি ইন্টারনেট ব্যবহার পর্যন্ত খুঁটিয়ে দেখেছিল।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মুখের স্বীকৃতি সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে সরকারি নজরদারি সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখার জন্যেও কোম্পানিটি সমালোচিত হয়েছে।
বর্তমান অবস্থা
টানা ১৭ বছর লোকসানে চলার পর আজ এর মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার।
২০২৫ সালে ট্রাম্প নির্দেশ দেন, আমেরিকার সব সরকারি দপ্তরের তথ্যভান্ডার—কর, স্বাস্থ্য, অভিবাসন, নজরদারি—পালান্টিরের সঙ্গে যুক্ত করতে।
এক সময়ের ছোট্ট সফটওয়্যার কোম্পানি এখন আমেরিকার গোয়েন্দা, সেনাবাহিনী, সরকারি দপ্তর ও বড় কর্পোরেটের মূল ভরসা হয়ে উঠেছে।
নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক