
বৃহত্তর সিলেট-৩ আসনের (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও আংশিক বালাগঞ্জ) এর জনগণের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি খোলা চিঠি দেওয়া হয়েছে। ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই-কে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অত্র এলাকায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চান স্থানীয় জনগণ। চিঠির অবিকল প্রকাশ করা হলো:
বরাবর
মাননীয় বিএনপি হাইকমান্ড,
আসসালামু আলাইকুম।
আমরা বৃহত্তর সিলেট-৩ আসনের (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও আংশিক বালাগঞ্জ) সাধারণ ভোটার এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী সৈনিক। আমরা এই এলাকার গণতন্ত্রকামী জনগণ, দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির অনুগত সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আপনাদের প্রতি আমাদের এই আবেদন (খোলা চিঠি) প্রেরণ করছি।
প্রেক্ষাপট
আপনারা জানেন, সিলেট-৩ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন। এখানে বিএনপির মনোনয়নের জন্য বেশ কয়েকজন আগ্রহীপ্রার্থী আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নিঃসন্দেহে তারা দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, তবে এও সত্য যে, শহীদ জিয়া আজ জীবিত থাকলে কেবল আনুগত্য নয়—প্রার্থীর পারিবারিক ঐতিহ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সততা, নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে তবেই মনোনয়ন দিতেন। প্রয়োজনে তিনি যোগ্য ব্যক্তিকে নিজে ডেকে এনে প্রার্থী হতে অনুরোধ করতেন। এবং একসময় তিনি জনাব এম সাইফুর রহমান কে যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে লন্ডন থেকে ডেকে অর্থমন্ত্রী করেন, এটা তার জলন্ত উদাহরণ। এরকম আরও অনেক উদাহরণ আছে।
এই বিবেচনায়, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি—সিলেট-৩ আসনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করতে হলে এখানে একজন যোগ্য ও উপযুক্ত প্রার্থী নিশ্চিত করতে হবে। এই লক্ষ্যে শহীদ জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং ডা. জোবায়দা রহমানের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর ডা. আলাউদ্দিন সাহেবের পরিবার থেকে কাউকে সামনে আনতে হবে এটাও আমাদের প্রাণের দাবি। এ পরিবার, এ অঞ্চলের সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত, শিক্ষিত ও সমাজসেবামুখী পরিবার হিসেবে পরিচিত। সেই পরিবারের কৃতী সন্তান ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই অন্যন্য প্রার্থীদের তুলনায় একজন উচ্চশিক্ষিত সর্বতোভাবে যোগ্য প্রার্থী, তার বিকল্প তিনি নিজেই, যিনি সিলেট-৩ আসনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে আমরা মনে করি।
শিক্ষাজীবন ও প্রাথমিক ক্যারিয়ার
ড. ফয়েজ উদ্দিন আশির দশকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর কর্মজীবন শুরু করেন আইএফআইসি ব্যাংক, ঢাকা-তে অফিসার হিসেবে।
তবে তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল আরও বড়—শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কার্যকর অবদান রাখা। তাই তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে গমন করেন।
উচ্চশিক্ষা ও আন্তর্জাতিক একাডেমিক অর্জন
• ২০০৪ সালে ডিপ্লোমা ইন পাবলিক পলিসি ম্যানেজমেন্ট সম্পন্ন করেন।
• ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম থেকে পাবলিক পলিসিতে দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
• ২০২৪ সালে ডেনমার্কের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুল অব স্ক্যান্ডিনেভিয়া (IBSS) থেকে পাবলিক সার্ভিস বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
এই একাডেমিক অর্জন তাঁর জ্ঞানভিত্তিক নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দক্ষতাকে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে।
কর্মজীবন ও নেতৃত্বগুণ
ড. ফয়েজ উদ্দিন ১৯৯৩ সালে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিল-এ সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। নিষ্ঠা, সততা ও পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে তিনি পদোন্নতি পেয়ে প্রিন্সিপাল ম্যানেজার পদে অধিষ্ঠিত হন। ২০১৪ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন।
অবসরের পরও তিনি থেমে থাকেননি। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দুটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান:
• New Hope Global
• New Hope Education CIC
এই দুটি সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সমাজসেবা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও গৌরব
জনসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁকে “Member of the Order of the British Empire (MBE)” উপাধিতে ভূষিত করেন। এটি কেবল তাঁর ব্যক্তিগত সম্মান নয়, বরং প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজ ও বিএনপির জন্য এক বিরল গৌরব।
রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভূমিকা
ড. ফয়েজ উদ্দিন দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি বিএনপির ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস রিজিয়নের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন প্রবাসে বিএনপির অন্যতম ভরসাস্থল। একজন মানবাধিকার সংগঠক হিসেবে তিনি জাতিসংঘ কমনওয়েলথ (ওআইসি), ব্রিটিশ সরকারের ও আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের হারানো গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এর ফলে তিনি স্বৈরাচারী সরকারের রোসানলে পড়েন। তার গ্রামের বাড়িতে বহুবার হামলা চালানো হয়৷ স্বৈরাচারের সময় তার আপন বড় দুই ভাই প্রক্ষ্যাত চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন ও অ্যাডভোকেট আখতার উদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। গ্রেফতারের আশংকায় তিনি ভাইদের জানাজায় পর্যন্ত অংশ নিতে পারেন নি। তার এই আত্যত্যাগ তাকে কেবন একজন রাজনৈতিক নেতা নয় বরং শহীদ জিয়ার আদর্শের প্রতি অটল এক সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারাই একমাত্র পরিবার যারা জাতীয়তাবাদের আদর্শে দীর্ঘদিনের অনুপ্রেরণা।
তিনি প্রবাস থেকে বিএনপি ও বাংলাদেশের পক্ষে যে কণ্ঠস্বর উঁচু করেছেন, তা নিঃসন্দেহে দলের আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে।
পারিবারিক জীবন ও মূল্যবোধ
ড. ফয়েজ উদ্দিন সম্ভ্রান্ত পরিবারের কর্ণধার। তাঁর স্ত্রী একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তাঁদের চার সন্তান উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন:
• জ্যেষ্ঠ কন্যা একজন আইনজীবী।
• একমাত্র পুত্র বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান রোলস-রয়েসে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি তিনি মিশরের কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও হিফজ অধ্যয়ন করছেন।
• দ্বিতীয় কন্যা চিকিৎসাশাস্ত্রে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত।
• কনিষ্ঠ কন্যা এ-লেভেল সম্পন্ন করছে।
তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, একজন দায়িত্বশীল অভিভাবকও, যিনি সন্তানদের সর্বোচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করেছেন।
কেন ড. ফয়েজ উদ্দিন এমবিই সিলেট-৩ এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী?
১. শিক্ষাগত যোগ্যতা – একাধিক উচ্চতর ডিগ্রি তাঁকে নীতিনির্ধারণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় দক্ষ করেছে।
২. আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা – যুক্তরাজ্যে দীর্ঘ কর্মজীবন তাঁকে বিশ্বদৃষ্টি সম্পন্ন নেতা করেছে।
৩. সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা – রানীর এমবিই উপাধি তাঁর সততা ও জনসেবার প্রমাণ।
৪. রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা – ছাত্রদল থেকে প্রবাস বিএনপি পর্যন্ত দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাঁকে দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ নেতা করেছে।
5. পারিবারিক ঐতিহ্য – সম্ভ্রান্ত পরিবার তাঁকে জনগণের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
6. ভোটার আস্থা – এ অঞ্চলের মানুষ তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল।
7. দূরদর্শিতা ও সততা – তিনি একজন নীতিবান, মার্জিত ও দূরদর্শী নেতা, যিনি বিএনপির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন।
উপসংহার
মাননীয় নেতৃবৃন্দ,
আমরা বিনীতভাবে বিশ্বাস করি—যদি সিলেট-৩ আসনে ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই-কে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়, তবে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত হবে। অন্যথায়, এই আসন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি—তিনি যেন ড. ফয়েজ উদ্দিন এমবিই ও তাঁর পরিবারকে সুস্বাস্থ্য, শান্তি ও দীর্ঘায়ু দান করেন এবং বাংলাদেশের কল্যাণে তাঁর যোগ্যতা কাজে লাগানোর সুযোগ দেন। আমীন।
বিনীত শুভেচ্ছান্তে,
সিলেট-৩ আসনের সর্বস্তরের জনগণ ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ
নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক