সরাসরি দখল নয়, যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্রিনল্যান্ডের দুর্লভ খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়
মার্কিন সরকার এখন গ্রিনল্যান্ডের বিরল খনিজ সম্পদ (rare earth minerals) নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার নতুন কৌশল নিচ্ছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত ক্রিটিক্যাল মেটাল ক্রপস নামের একটি মার্কিন কোম্পানির শেয়ার কিনতে চাইছে — এই কোম্পানিই বর্তমানে গ্রিনল্যান্ডের ট্যানব্রিজ (Tanbreez) নামের বিশাল বিরল খনিজ খনির মালিক।
যদি এটি সত্যি হয়, তবে এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলে একটি বড় পরিবর্তন। আগে যেখানে হোয়াইট হাউস সরাসরি গ্রিনল্যান্ডকে কিনে নেওয়া বা দখলের চিন্তা করেছিল, এখন তারা বিনিয়োগ ও খনিজ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দ্বীপটির সম্পদ নিজেদের হাতে নিতে চাইছে।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই খনিজঃ
বিরল খনিজ বা Rare Earths হলো এমন ধাতু যা চুম্বকীয় ও উচ্চ-প্রযুক্তি পণ্য তৈরিতে অপরিহার্য। এগুলো ব্যবহার হয় —
১. ইলেকট্রিক গাড়ি (EVs)
২. মিসাইল সিস্টেম
৩. কম্পিউটার চিপ ও উন্নত ইলেকট্রনিক যন্ত্রে
বর্তমানে বিশ্বের ৮০% এর বেশি বিরল খনিজ সরবরাহ করে চীন, ফলে পশ্চিমা দেশগুলো চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে মরিয়া হয়ে নতুন উৎস খুঁজছে।
গ্রিনল্যান্ডের সম্পদ ভান্ডারঃ
বরফে ঢাকা গ্রিনল্যান্ড শুধু বিরল খনিজ নয়, বরং তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদেও সমৃদ্ধ।
গ্রিনল্যান্ডের প্রধান বিরল খনিজ প্রকল্পগুলো হলোঃ-
১. ট্যানব্রিজ প্রকল্প (Tanbreez Project):
অবস্থান: দক্ষিণ গ্রিনল্যান্ড
মজুদ: প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন
মালিক: ক্রিটিক্যাল মেটালস ক্রপস (Critical Metals Corp, USA)
উৎপাদন শুরু সম্ভাব্য সময়: ২০২৮ সাল
২. কভানেফিয়েল্ড (Kvanefjeld Project):
অবস্থান: দক্ষিণ গ্রিনল্যান্ড
মজুদ: ১ বিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি আকরিক, যাতে rare earth, দস্তা ও ইউরেনিয়াম রয়েছে
মালিক: এনার্জি ট্রানজিশন মিনারেলস (Energy Transition Minerals, Australia)
প্রকল্পটি এখন স্থগিত, কারণ গ্রিনল্যান্ড সরকার ইউরেনিয়াম খনন নিষিদ্ধ করেছে
৩. সারফারটক প্রকল্প (Sarfartoq Project):
অবস্থান: দক্ষিণ-পশ্চিম গ্রিনল্যান্ড
মজুদ: প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন rare earth oxides
মালিক: নিউ পারফর্মেন্স মিনারেলস (Neo Performance Materials, Canada)
এখনো অনুসন্ধান চলছে, পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরু হয়নি
ভূরাজনৈতিক তাৎপর্যঃ
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ মূলত চীনের ওপর খনিজ নির্ভরতা কমানো ও উত্তর মেরু অঞ্চলে প্রভাব বাড়ানোর অংশ।
এভাবে গ্রিনল্যান্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে ওয়াশিংটন একদিকে কৌশলগত খনিজ নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়, অন্যদিকে রাশিয়া ও চীনের উত্তর মেরুতে উপস্থিতিকে ভারসাম্যে আনতে চায়।
সূত্র: জিওপলিটিক্স প্রাইম, রয়টার্স
নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক