ইসলামি দাম্পত্যে নারীর মর্যাদা
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমাদের মাঝে সে সবচেয়ে ভালো, যে তার পরিবারের জন্য ভালো। আর আমি আমার পরিবারের জন্য সবারচেয়ে ভালো। (জামে তিরমিযী ২/২২৮, হাদীস ৩৮৯৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪২)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
সবচেয়ে কামিল মুমিন সে, যার স্বভাব ও আচরণ সবচেয়ে ভালো। আর তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ সে, যে তার স্ত্রীর জন্য শ্রেষ্ঠ। (জামে তিরমিযী ১/২১৯, হাদীস ১১৬২)
নারীর মর্যাদা ও ইসলামে তার মূল্যায়ন সংক্রান্ত আরো অনেক হাদীস রয়েছে, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কারো ভালো-মন্দের একটি মাপকাঠি হল স্ত্রীর সাথে তার আচরণ। আল্লাহ তাআলা বৈবাহিক সম্পর্ককে মিয়াঁ-বিবি উভয়ের জন্য শান্তি ও পবিত্রতার মাধ্যম বানিয়েছেন এবং এ মধুর সম্পর্ককে তাঁর বিশেষ নিয়ামত সমূহের মধ্যে গণ্য করেছেন। মিয়াঁ-বিবি উভয়ে যদি একে অপরের হকের বিষয়ে খেয়াল রাখে, তাহলে এ সম্পর্কই পুরো পরিবেশকে জান্নাতী পরিবেশে পরিণত করে। পক্ষান্তরে খোদানাখাস্তা এ সম্পর্কে যদি চির ধরে তাহলে পুরো পরিবেশ বিষিয়ে ওঠে এবং জীবনটাই একটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এতে কেবল পার্থিব সুখ-শান্তিই বিদায় নেয় না, ধীরে ধীরে তা দ্বীন ও ঈমান, দুনিয়া ও আখেরাত সবকিছুই বরবাদ করে ছাড়ে। আর এ কারণেই শয়তান স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারলে যত পুলকিত হয়, অন্য কিছুতেই তত হয় না। সহীহ মুসলিমের একটি হাদীসে আছে: ইবলিস পানির উপর তার আসন পাতে। তারপর মানুষকে বিপথগামী করার জন্য তার চেলাদের এদিক ওদিক প্রেরণ করে। যে যত বিপথগামী করতে পারে, সে তার তত নৈকট্য অর্জন করে। তো ইবলিস যখন তার পেয়াদাদের কার্যবিবরণী শোনে তখন এক চেলা বলে আজ আমি অমুকের মাধ্যমে এই এই গোনাহ সংঘটিত করেছি। ইবলিস বলে, নাহ, কিছুই করতে পারিসনি। আরেক চেলা বলে, আমি অমুকের পিছে লেগেই ছিলাম। তাকে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আর স্ত্রীকে তার বিরুদ্ধে এমনভাবে ক্ষেপিয়ে তুলি যে, অবশেষে এদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে এসেছি। ইবলিস এ শুনে তাকে জড়িয়ে ধরে। বলে, শাবাশ! কাজের কাজ তুমিই যা করেছ। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮১৩)
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারলে শয়তানের এত আনন্দ কেন? কারণ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি ও বিচ্ছেদ শুধু তাদের দুয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। উভয়ের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার সম্পর্ককেই তা প্রভাবিত করে। যার কারণে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
বৈবাহিক সম্পর্কের এই গুরুত্বের নিরিখে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের যে হেদায়েত দিয়েছেন, তা যথাযথ মেনে চললে পরিবারিক অশান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে সীরাত ও সুন্নাহ এক গুরুত্বপূর্ণ হেদায়েত হল, পরিবার-পরিজনের সাথে সুন্দর ও কোমল ব্যবহার। ঘরের ভেতর আইনের শাসন চলে না। এখানে প্রীতি ও ভালবাসা এবং আখলাক ও ব্যক্তিত্বের প্রভাবই কার্যকর হয়। যারা নিজের ঘরে সামান্য সামান্য বিষয়ে চটে যান, হুমকি ধমকি ও রুক্ষতার দ্বারা দাম্পত্যের চাকা সচল রাখতে চান, তারা আসলে বিকারগ্রস্ত। সুন্দর ব্যবহার পাওয়া স্ত্রীর সবচে’ বড় হক এবং ঈমানের দাবি।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরোক্ত নির্দেশনা যদিও মৌলিকভাবে পুরুষের উদ্দেশে এবং ঘরে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তোলাও মৌলিকভাবে তারই দায়িত্ব, তথাপি মুসলিম রমণীগণও এখান থেকে দিকনিদের্শনা গ্রহণ করতে পারেন; করা উচিতও বটে। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঈমানের পূর্ণতায় তিনিই অগ্রগামী, যিনি অন্যের চেয়ে ভালো ব্যবহার উপহার দিতে পারেন।
ভালো আখলাকের একটি দিক হচ্ছে, নিজের অধিকার তলবের চেয়ে অপরের হক আদায়ে বেশি সচেষ্ট থাকা। কোনো বিষয়ে একজন রেগে গেলে অপরজনও ফুঁসে ওঠবে না। ধৈর্য্য ও কোমলতার সাথে আপোস-মীমাংসা করবে।
আল্লামা আবদুল ওয়াহহাব শা‘রানী রাহ. বলেন, এক লোক তার শায়েখের কাছে বিবির মুখরা স্বভাবের অভিযোগ করলে তিনি বললেন, স্ত্রীর দেয়া যন্ত্রণা যে সইতে পারে না, সে স্ত্রী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে কীভাবে!
তো দাম্পত্য জীবনে হুসনে আখলাক যত কার্যকর থাকবে জীবন যাপনও তত সুখের হবে। মিয়াঁ-বিবির যিনিই হুসনে আখলাকে ভূষিত হবেন তিনিই সুন্দর ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবেন। বস্তুত ভালো ব্যবহারই ঐ উপায়, যা দাম্পত্য জীবনকে শান্তিময় করতে পারে।
মূল লেখা: মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানবী
নিউজ টুডে বিডি/নিউজ টুডে