1. Home
  2. ধর্ম
  3. ইসলাম
  4. সালাত মুসলিম জীবনে এক তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদতের নাম
সালাত মুসলিম জীবনে এক তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদতের নাম

সালাত মুসলিম জীবনে এক তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদতের নাম

0
  • 1 week ago,

সালাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা একজন মুসলমানের জীবনে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, শৃঙ্খলা এবং আত্মশুদ্ধি আনে।  সালাত থেকে যে শিক্ষা পাওয়া যায় তা শুধু ধর্মীয় নয়, বরং ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ‌্য।

সালা‌তের গুরুত্ব, তাৎপর্য, শিক্ষাসমূহ:

১. আল্লাহর একত্ববা‌দের ঘোষণা: সালা‌তের মাধ‌্যমে আমরা মহান আল্লাহর একত্ববা‌দ, শ্রেষ্ঠত্ব ও প‌বিত্রতার ঘোষণা ক‌রি। “আমি আল্লাহ! আমি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই; অতএব আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।” (সূরা: ত্বাহা,আয়াত:১৪)

২. আল্লাহ প্রতি গভীর বিশ্বাস ও  কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: সালাতে সূরা ফা‌তিহার মাধ‌্যমে আমরা আল্লাহর মহিমা প্রকাশ ক‌রি, শোকর আদায় করি , তাঁর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং তার কা‌ছেই সাহায‌্য চাই। “আল্লাহরই জন্য সমস্ত প্রশংসা, যিনি বিশ্বজগতের রব। যিনি পরম দয়ালু, অতিশয় করুণাময়। যিনি বিচার দিনের মালিক। আমরা আপনারই ইবাদাত করছি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাচ্ছি।” (সূরা: ফ‌া‌তিহা, আয়াত: ২-৫)

৩. আল্লাহর প্রতি আনুগত্য: সালাত এর মাধ‌্যমে আমরা আল্লাহর দাস বা গোলাম হিসা‌বে তাঁর উ‌দ্দে‌শ্যে বিনীতভা‌বে দাঁড়ি‌য়ে আনুগত‌্য প্রকা‌শের সু‌যোগ পায়। “তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে বিশেষতঃ মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও।” (সূরা: বাকারা, আয়াত:২৩৮)

৪. শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা: সালাত নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে হয়, যা সময়ের গুরুত্ব উপলব্ধি এবং প্রতিদিনের জীবনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার অভ্যাস তৈরি ক‌রে। “সুতরাং তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সন্ধ্যায় ও প্রভাতে, আর অপরাহ্নে ও যুহরের সময়; এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকল প্রশংসা তাঁরই।” (সূরা: রুম, আয়াত:১৭,১৮) “নিশ্চয়ই সালাত বিশ্বাসীগণের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত।” (সূরা: নিসা, আয়াত: ১০৩)

৫. ম‌নযোগ ও নিয়মানুবর্তিতা: সালাতে গভীর ম‌নোসং‌যোগ ও আল্লাহর প্রতি বিশুদ্ধ আনুগত‌্যর সা‌থে প্রতিটি ধাপ (নিয়ত, রুকু, সিজদা) নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে করতে হয়। এটি আমাদের ম‌নযোগ বৃ‌দ্ধি ও  জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়মানুব‌র্তিতা রক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ করে। এরশাদ হচ্ছে “তোমরা প্রত্যেক সালাতে তোমাদের মনযোগ স্থির রেখ এবং তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধ মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁকেই ডাক” (সূরা: আরাফ, আয়াত:২৯)

৬.জীবনের সঠিক পথ ও দিকনির্দেশনা: সালাতের প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সরল সঠিক পথের (‌সিরাতল মুছতাকীম) দিকনির্দেশনা চাওয়া হয়।  “আমাদের সরল পথ প্রদর্শন করুন, তাদের পথ যাদের প্রতি আপ‌নি অনুগ্রহ ক‌রে‌ছেন।” (সূরা: ফাতিহা, আয়াত:৬-৭)

৭. অশ্লীলতা বর্জন ও আ‌ত্মিক শু‌দ্ধিতা : বিশুদ্ধ সালাত আমাদের অশ্লীল ও মন্দ কাজ হ‌তে দূ‌রে রে‌খে হৃদয়কে পবিত্র করে, আত্মাকে উন্নত করে, গুনাহ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয় এবং আল্লাহর নৈক‌ট্যে পৌঁ‌ছে দেয়। এরশাদ হচ্ছে “তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব আবৃত্তি কর এবং সালাত প্রতিষ্ঠিত কর। নিশ্চয়ই সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে। আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা জানেন।”

(সূরা: আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)

৮. ধৈর্য ও স্থিরতা: সালাত ধৈর্যশীল এবং মানসিকভাবে স্থিতিশীল হতে সাহায্য করে। এটি জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাহস, আত্ম‌বিশ্বাস ও সহনশীলতা প্রদান করে। এরশাদ হচ্ছে “হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলগণের সাথে আছেন।” (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৩)

৯. পাপ মু‌ক্তি: আল্লাহর নি‌র্দেশ পালনকারী ব্যক্তি‌দের  চরিত্রে সালাত ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং পাপের প্রভাব দূর করে। এরশাদ হচ্ছে “এবং সালাতের পাবন্দী হও দিনের দু’ প্রান্তে ও রাতের কিছু অংশে; নিঃসন্দেহে সৎ কার্যসমূহ অসৎ কার্যসমূহকে মিটিয়ে দেয়; এটা হচ্ছে একটি (ব্যাপক) নাসীহাত, নাসীহাত মান্যকারীদের জন্য।” (সূরা: হুদ, আয়াত: ১২৪)

১০. জীবনের উদ্দেশ্য স্মরণ: সালাত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী এবং আমাদের সৃ‌ষ্টির আসল উ‌দ্দেশ‌্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করা এবং পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেয়া। এরশাদ হচ্ছে “আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে।” (সূরা: আয-যা‌রিয়াত, আয়াত:৫৬ )

১১. দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ: আল্লাহর প্রতি বিনয়ী ও নম্র ভা‌বে সালাত আদায় দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার মূল চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে। এরশাদ হচ্ছে “অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মু’মিনগণ, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়, নম্র “

(সূরা: আল-মু’মিনুন, আয়াত:১-২)

১২. অম‌নযোগী ও লোক‌ দেখা‌নো সালাত: সালাত হ‌লো আল্লাহর নৈকট‌্য লা‌ভের সরাস‌রি ইবাদত সুতরাং সালা‌তে অম‌নযোগী ও লোক দেখা‌নো সালাত আল্লাহর কা‌ছে গ্রহণ‌যোগ‌্য নয়। এরশাদ হচ্ছে “সুতরাং পরিতাপ সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য , যারা তাদের সালাতে অমনোযোগী,

যারা লোক দেখানোর জন্য ওটা করে।”(সূরা: মাউন, আয়াত: ৪-৬)

১৩. প‌রিষ্কার প‌রিচ্ছন্নতা ও শালীন পে‌াশাক: সালা‌ত আমা‌দের প‌রিষ্কার প‌রিচ্ছন্নতা, প‌বিত্রতা অর্জন এবং সুন্দর ও শালীন পোশাক প‌রিচ্ছ‌দ প‌রিধা‌নের শিক্ষা দেয়। এরশাদ হচ্ছে “হে আদম সন্তান! প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ গ্রহণ কর” (সূরা: আরাফ, আয়াত: ৩১)

“হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হও তখন (সালাতের পূর্বে) তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলিকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসাহ কর এবং পা’গুলিকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেল। যদি তোমরা অপবিত্র হও তাহলে গোসল করে সমস্ত শরীর পবিত্র করে নাও।” (সূরা:মা‌য়িদাহ, আয়াত:৬ ) 

১৪. শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা: সালাত আমাদের শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে। প্রতিদিন পাঁচবার সলাত আদা‌য়ের ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়, শারী‌রিক ব‌্যায়াম হয়। সালাত মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদয়কে প্রশান্ত রাখে।

১৫. একতা ও সমতা: জামাতে সালাত আদায়ের মাধ্যমে ধনী-গরিব, জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের ম‌ধ্যে বি‌ভেদ দূর হয়। এটি মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে।

১৬. ক্ষমা প্রার্থনার শিক্ষা: সালাতে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ইস্তিগফার করা হয়। এটি আমাদের গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হতে এবং ভবিষ্যতে সৎ পথে চলার সংকল্প নিতে সাহায্য করে।

১৭. সমাজে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা: সালাত সমাজে ন্যায়, নৈতিকতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যম। এটি মানুষকে অন্যায়, অশ্লীলতা এবং দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে উৎসাহিত করে।

সালাত ইবাদত এর সাথে শুদ্ধতা, শৃঙ্খলাবোধ, সময়ানুব‌র্তিতা, সমতা প্রভৃ‌তি সহ আল্লাহর প্রতি তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল এর  শিক্ষা দেয়। সালাতের এই শিক্ষাগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন এর মাধ‌্যমে ব‌্যক্তি ও সামাজিক জীব‌নে সালাত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। মহান আল্লাহ আমা‌দের সকল‌কে স‌ঠিকভা‌বে সালাত আদায়কারী হি‌সে‌বে কবুল করুন।

নিউজ টুডে বিডি/নিউজ ডেস্ক