1. Home
  2. ধর্ম
  3. ইসলাম
  4. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কোরআন
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কোরআন

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কোরআন

0
  • 6 days ago,

ন্যায়বিচার পাওয়া প্রতিটি মানুষের অধিকার। সমাজে যত অন্যায়-অনাচার এর মূলে রয়েছে ন্যায়বিচারহীনতা। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে অনাচার অনেকাংশেই কমে আসবে। সবাই সুফল ভোগ করবে। ইসলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিশতভাবে বর্ণনা করেছেন।  

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা হিসেবে তোমরা দৃঢ়ভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী হও, এমনকি সেই সাক্ষ্য তোমাদের নিজেদের বা পিতামাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে গেলেও। যার সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয়া হচ্ছে, সে ধনী হোক বা গরীব, আল্লাহ্ উভয়েরই সর্বোত্তম অভিভাবক। অতএব তোমরা যাতে ন্যায়বিচার করতে সক্ষম হও, সেজন্য তোমরা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করো না আর তোমরা যদি পেঁচানো কথা বল অথবা সত্য এড়িয়ে যাও, তবে মনে রেখো, তোমরা যা কর সে বিষয়ে নিশ্চয় আল্লাহ পুরোপুরি অবগত আছেন।’ -(সুরা নিসা: ১৩৫) 

মহান আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোনো কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। -(সুরা মায়োদা: ৮)

আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে কোনো বিচার-ফয়সালা কর, তখন ইনসাফভিত্তিক ফয়সালা কর। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সদোপদেশ দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা শোনেন এবং দেখেন।‘ -(সুরা নিসা : ৫৮)

অন্য সুরায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ন্যায়বিচার, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দিয়েছেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অপছন্দনীয় কাজ এবং অবাধ্য হতে নিষেধ করেছেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। -(সুরা আননহল : ৯০)

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না করলে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে কোরআনে। বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে না তারাই কাফের।’ -(সুরা আল-মায়িদাহ: ৪৪)

ন্যায়ের বিধান সর্বকালের ও সব সমাজের জন্য। সব আসমানি কিতাবে এই নির্দেশ রয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘স্মরণ করো দাউদ ও সোলায়মানের কথা, যখন তারা বিচার করছিল শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে, তাতে রাত্রিকালে প্রবেশ করেছিল কোনো সম্প্রদায়ের মেষ, আমি প্রত্যক্ষ করতে ছিলাম তাদের বিচার।’ (সুরা- আম্বিয়া, আয়াত: ৭৮)

আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার করো এবং খেয়ালখুশির অনুসরণ কোরো না, কেননা এটা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয় তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি, কারণ তারা বিচার দিবসকে বিস্মৃত হয়েছে।’ -(সুরা-৩৮ সদর, আয়াত: ২২ ও ২৬)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও আজীবন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি কখনো স্বগোত্রীয় মানুষের পক্ষপাতিত্ব কিংবা স্বজনপ্রীতি দেখাননি; বরং প্রতিটি মুহূর্ত নিজের কর্ম পদ্ধতির মাধ্যমে সাহাবাদের মাঝে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। 

এবিষয়ে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মাখজুম গোত্রের এক চোর নারীর ঘটনা কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলল। এ অবস্থায় তারা বলাবলি করতে লাগল এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কে আলাপ করতে পারে? তারা বলল, একমাত্র রাসুল (সা.)-এর প্রিয়তম ওসামা বিন জায়েদ (রা.) এ ব্যাপারে সুপারিশ করার সাহস করতে পারেন। সবাই মিলে সুপারিশের জন্য ওসামা (রা.)-কে নির্ণয় করলেন। 

ওসামা নবী (সা.)-এর সঙ্গে কথা বললেন। নবী (সা.) বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকারিণীর সাজা মওকুফের সুপারিশ করছ? অতঃপর নবী (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবায় বললেন, তোমাদের আগের জাতি এ কাজই ধ্বংস করেছে যে যখন তাদের মধ্যে কোনো বিশিষ্ট অভিজাত লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অন্যদিকে যখন কোনো অসহায় গরিব সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার ওপর দণ্ড জারি করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা ফাতিমাও চুরি করত; তাহলে আমি তাঁর অবশ্যই (দণ্ডবিধি অনুসারে) হাত কেটে দিতাম। -(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪৭)

নিউজ টুডে বিডি /নিউজ ডেস্ক